এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
গত কয়েক বছর বাড়তে থাকা স্বর্ণের বাজার এখন পতনমুখী। দেশের বাজারে টানা চতুর্থ দফায় কমেছে মূল্যবান এ ধাতুর দাম। এর ফলে টানা গত নয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে স্বর্ণের বাজার। দাম কমেছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। ১২ এপ্রিল সর্বোচ্চ ২৪৩২ ডলার আউন্স উঠেছিলো স্বর্ণের দাম। ১৬ দিনের ব্যবধানে আউন্সে ৮০ ডলার কমে সেই স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ২৩৫২ ডলার। শুধু যে স্বর্ণের দাম কমেছে তাই না, কমেছে রুপা ও প্লাটিনামের দামও। কিন্তু এ দাম কমার কারণ কী?
করোনাভাইরাস বিশ্ব মহামারির সময় থেকে স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকে দেশ এবং বিশ্ব বাজারে। তখন বিশ্বব্যাপী সরকার এবং বিনিয়োগকারীদের মাঝে স্বর্ণ কিনে মজুদ এবং স্বর্ণে বিনিয়োগের প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। সেই জায়গা থেকে বিশ্ব অর্থনীতি আবারও বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। সরকার এবং বিনিয়োগকারীরা আবারও উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ শুরু করেছে। তাতে করে স্বর্ণের ওপার চাপ কমতে শুরু করেছে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় মূল্যে অস্থিতিশীলতাও স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ার একটি বড় কারণ ছিলো। এখন দেশের বাজারে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় মূল্য আগের অবস্থায় না ফিরলেও, একটা স্থিতিশীল অবস্থায় থাকায় কমছে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম।
এছাড়া, স্বর্ণের একটি বড় হাব হিসেবে বিবেচিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলো। সে গুলোর অনেক দেশই অপ্রত্যাশিত বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন। সেখানেও কমেছে স্বর্ণের দাম। ব্যবসায়ীরা ছাড় ও বিভিন্ন অফার দিয়ে স্বর্ণ বিক্রি করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে কমেছে স্বর্ণের দাম। যার প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন: বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার কারণে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে। দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর পরও আমরা দেখছি, গত কয়েক দিন ধরে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম নিম্নমুখী। বিশ্ববাজারে দাম কমার এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আমরাও স্বর্ণের দাম কমাবো। করোনাভাইরাস বিশ্ব মহামারির সময় বিনিয়োগ অনেকটা একমুখী হয়ে পড়েছিল। বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ কিনে মজুদ করে। এখন ধীরে ধীরে অর্থনীতি সচল হয়ে উঠেছে। বিনিয়োগকারীরাও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। স্বর্ণের দাম কমার এটি একটি কারণ হতে পারে।
সবশেষ গতকাল শনিবার স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। এতে দেশের বাজারে বেশির ভাগ স্বর্ণের দর আরেক দফা কমে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ৬৩০ টাকা কমানো হয়েছে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম কমে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৩১ টাকা দাড়ায়।
এর আগে গত ২৩, ২৪ ও ২৫ এপ্রিল স্বর্ণের দাম কমায় বাজুস। ২৩ এপ্রিল ৩ হাজার ১৩৮ টাকা, ২৪ এপ্রিল ২০৯৯ টাকা এবং ২৫ এপ্রিল ৬৩০ টাকা কমানো হয়।
গত ৬, ৮ ও ১৮ এপ্রিল স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছিল বাজুস। এর মধ্যে ৬ এপ্রিল বেড়েছিল ১৭৫০ টাকা, ৮ এপ্রিল ১৭৫০ টাকা এবং ১৮ এপ্রিল বেড়েছিল দুই হাজার ৬৫ টাকা।
বাজুস জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম কমেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণ ১ লাখ ১২ হাজার ৯৩১ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৭ হাজার ৭৯৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ৯২ হাজার ৪০২ টাকা। তবে সব ধরনের স্বর্ণের দাম কমলেও সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম বাড়িয়ে ৭৬ হাজার ৮৪২ টাকা করা হয়েছে।
স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে রুপার দাম। ক্যাটাগরি অনুযায়ী বর্তমানে ২২ ক্যারেটে প্রতি ভরি রুপার দাম দুই হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের দাম ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের দাম ১৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা।
বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের দাম কেন উঠা-নামা করে
যখনই বিশ্ববাজারে ডলারের ওপর আস্থাহীনতা তৈরি হয় তখনই স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকে। আবার যখন বিশ্ব অর্থনীতি ডলারের দিকে ফিরতে থাকে, উৎপাদনশীল বিনিয়োগ বাড়তে থাকে তখনই স্বর্ণের দাম কমতে থাকে।
এ প্রসঙ্গে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন: যখনই মানুষ ডলারের উপরে আস্থা হারায় তখন স্বর্ণের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের রেট বেড়ে যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম কমে যাওয়ার প্রভাব পড়ে স্বর্ণের বাজারে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন সংকটের সময় স্বর্ণ বেশি কেনে, তখন এর দাম বেড়ে যায়। আবার ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেল এবং স্বর্ণ একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। নানা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলার যেমন থাকে, তেমনি স্বর্ণও গচ্ছিত থাকে। যখনই তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো ডলারের দাম পড়ে যাবার আশঙ্কায় স্বর্ণে মূল্য পরিশোধের দাবি জানায় তখন স্বর্ণের দাম বেড়ে যায়। আবার তেলের দাম বাড়লে দ্রব্য মূল্য বাড়ে। যার ফলে শঙ্কিত হয়ে স্বর্ণ মজুদ রাখার প্রবণতা বাড়ে, তখন দামও বাড়ে।