বাংলাদেশের যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলা মানে এক বিষয়ে বারবার বলার মত ব্যাপার। জল স্থল আকাশ নৌপথে প্রাণহাণি এখন নৈমিত্তিক ঘটনা। এর মধ্যে আবার হুট করে দূরপাল্লার বাসগুলোতে শুরু হয়েছে ডাকাতি। অর্থাৎ সড়কপথে এখন নতুন করে ডাকাতি সংযোজন হয়েছে। বিগত দুদশক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও নির্মাণকালীন ব্যস্ততায় ডাকাতির কথা প্রায় ভুলে ছিল মানুষ। এবার ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণ। এই সংবাদ আতংকের!
২৪ থেকে ২৫ জন যাত্রী নিয়ে ঈগল পরিবহনের একটি বাস গত মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। বাসটি সিরাজগঞ্জের দিবারাত্রি হোটেলে খাবারের বিরতি শেষে রওনা হতেই পথে ১০ থেকে ১২ জন তরুণ বাসে ওঠে। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হতেই তারা ধারালো অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের হাত-মুখ বেঁধে ফেলেন এবং টাকাপয়সা, মুঠোফোন ও অলংকার লুট করে নেন। এ সময় একজন নারী যাত্রী সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ডাকাত দলের একজন বাসের চালককে মারধর করে সরিয়ে নিজেই চালকের আসনে বসে পড়েন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়ায় বাসটি রাস্তার পাশের বালুর ঢিবিতে আটকা পড়লে ডাকাতদল পালিয়ে যায়। একজন বাসযাত্রী বলেছেন: আমরা অসহায় ছিলাম। হাত, মুখ, চোখ বাঁধা ছিল। কিছুই করতে পারিনি। টানা তিন ঘণ্টা আমরা ওই বাসে জিম্মি ছিলাম। বাসটি কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল, আমরা কিছুই জানতাম না।
গণপরিবহনের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে। হাইওয়ে পুলিশকে অনেক সময় বাসে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে। ঈগল পরিবহনের বাসে যে নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তিনি কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসছিলেন তৈরি পোশাক কারখানায় কাজের সন্ধানে। কিন্তু আমাদের সড়ক পরিবহনব্যবস্থা কিংবা সড়কের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত হাইওয়ে পুলিশও তাকে ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি।
মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় সংঘবদ্ধ ডাকাত দল ও পরিবহনকর্মীদের মধ্যে যোগসাজশ থাকে। এ ক্ষেত্রেও সে রকম কিছু ঘটেছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা দরকার। আমরা মনে করি সাধারণ মানুষের ভেতর হঠাৎ জেঁকে বসা এই নিরাপত্তাহীনতা দূর করার দায়িত্ব সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর। অতীতে এই ধরণের অপরাধের কোনো শাস্তি না হওয়াতে মহাসড়কে দুবৃর্ত্তদের সাহস বেড়েছে। আশা করি দূর পাল্লার ও স্বল্প পাল্লার বাসে যাত্রীদের আরও নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষ দ্রুতই পদক্ষেপ নিয়ে যাত্রীদের ভীতি দূর করবে।