চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রুচির দুর্ভিক্ষ কী?

‘আমরা একটা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেছি। সেখান থেকে হিরো আলমের মতো একটা লোকের উত্থান হয়েছে। যে উত্থান কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির উত্থান। এই উত্থান কীভাবে রোধ করা যাবে, এটা যেমন রাজনৈতিক সমস্যা, তেমনি আমাদের সাংস্কৃতিক সমস্যাও।’ সম্প্রতি অভিনয় শিল্পী সংঘের একটি অনুষ্ঠানে এই কথাগুলো বলেছেন প্রখ্যাত অভিনেতা নাট্যকার মামুনুর রশীদ। 

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন হিরো আলমও। মামুনুর রশীদের বক্তব্যের বিপরীতে তিনি বলেছেন, ‘আমাকে তৈরি করে দেখান। আর বারবার যদি হিরো আলমকে নিয়ে আপনাদের রুচিতে বাধে, তাহলে হিরো আলমকে মেরে ফেলেন।’

‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ ইস্যুতে সরগরম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আলোচনা সমালোচনা নেট দুনিয়ায়। কেউ পক্ষে বলছেন আবার কেউ বা বিপক্ষে।

নিজের অবস্থান ব্যক্ত করে ফেসবুকে সিনিয়র সাংবাদিক আনিস আলমগীর লিখেছেন:

হিরো আলম প্রসঙ্গে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, অভিনেতা এবং নাট্যকার মামুনুর রশীদ যখন বলেন, “আমরা একটা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেছি” তখন তার এই বক্তব্যের পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হলেও, আমি মনে করি তিনি বেঠিক বলেননি।

কিন্তু হিরো আলমের সংস্কৃতি আমাকে আতঙ্কিত করে না কারণ তার কর্মকাণ্ড ইন্টারনেট ভিত্তিক, যেখানে আমাদের প্রত্যেকের ওই সংস্কৃতি দেখা না দেখার অধিকার রয়ে যায়। আমরা দেখছি একান্তভাবে। আমার রুচি হয় না হিরো আলমের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ইউটিউবে বা ফেইসবুকে দেখার। আবার যারা দেখছেন সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার, সে ক্ষেত্রে আমার মাথা ব্যাথা নেই। খারাপ চোখে দেখিনা হিরো আলমকেও। আমি প্রশ্ন রাখতে চাই মামুনুর রশীদদের- মূলধারার সংস্কৃতিতে যখন দুর্ভিক্ষ লেগেছে তখন আপনারা কি করছেন? আপনাদের এক নাট্যকার বছরের পর বছর ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নামে একটা নাটক বানিয়ে সমাজে নিকৃষ্ট সংস্কৃতির বিস্তার, অশ্লীলতা, অসভ্যতার প্রচার করছে জাতীয় টেলিভিশনে। আপনারা সেগুলো দেখেন না? হিরো আলমের সাংস্কৃতিক রুচি নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে, আপনাদের তো উচিত ব্যাচেলর পয়েন্ট নামের নাটকের অভিনেতা নাট্যকার সবাইকে সমাজে একঘরে করা। ঠিক না হলে সামাজিক অনুষ্ঠানে ওদেরকে জুতাপেটা করতে বলা।
সেই কাজটা আগে করেন।

৯০’র ছাত্র-গণ অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা মিন্টু আনোয়ার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন:

আশা করি রুচিবান মামুনুর রশিদ জবাবটা পেয়েছেন।
যখন রুচিবানেরা অন্যায়ের সামনে নতজানু হয়ে,
মেরুদণ্ডহীনের মত নির্লজ্জ স্তুতিতে ব্যাস্ত থাকে
এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করার দায়িত্ব ভুলে যায়,
তখন সেই বেশরম রুচি সাধারণে অপাংতেয়।
মামুনুর রশিদেরা সেই রুচির মঞ্চে চেয়ারে বসে,
সুমিষ্ট হালুয়া সেবন করে নিজেকে ধন্য করুন।
আর তিত করলার রসে সিক্ত অরুচির স্পর্ধায়,
প্রতিবাদি হিরো আলমরা স্বাস্থবান হয়ে বেড়ে উঠুক।
দূর হোক রুচিকর সকল অবিচার-অন্যায়।
ভেসে যাক সব, অরুচির প্রতিরোধ বন্যায়

প্রকাশক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট রবিন আহসান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন:

আমি মুক্তগণমাধ্যমে বিশ্বাসী! মুক্ত বিনোদনে বিশ্বাসী হিরো আলম তার সমাজ নিয়ে থাকুক মামুনুর রশীদ তাঁর সংস্কৃতি নিয়ে। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মামুনুর রশীদদের সংখ্যা কমতে কমতে নাই হয়ে গেছে! যে দেশে ৩ টা শিক্ষাব্যবস্থা সেদেশে খিচুড়ি সংস্কৃতি থাকবে এটা বাস্তব! আমাদের তো জহির রায়হান মাপের কেউ নেই জিনি পাকিস্তানি ছবির পাল্টা বেহুলা সিনেমা করে দেখিয়ে দিতে পারেন গ্রামের মানুষের কথা গুলো! হিরো আলম হচ্ছে টোটাল ভুনা খিচুড়ি এটা প্রতিদিন গ্রামের মানুষদের ভলো লাগবে না লাগছেনা! হিরো আলমকে নিয়ে মামুনুর রশীদের কথা বলাটাই ভুল হয়েছে! হিরো আলম আমাদের কী ক্ষতিটা করল! এই সময় তো ওর কারণে আরো ২০ টা হিরো আলম তৈরি হতে পারতো তা হয়নি। হিরো আলম ডিস আর ইউটিউবে জনপ্রিয়! ভালো তো ডিস আর ইউটিউবে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ওয়াজ! আমি মনে করি ওয়াজের পাল্টা হিরো আলম গ্রামে গঞ্জে থাকলে ভালো। গ্রামের মানুষ বিটিভি দেখেনা ডিস টিভি দেখে না দেখে ইউটিউব বুঝে নেন বদলে গেছে পুরো ডিজিটাল মাধ্যম আর তার সাথে যুক্ত হয়েছে গ্রাম! মামুন ভাই গ্রামকে নতুন করে নতুন চোখে দেখতে হবে।

লেখক ও গল্পকার হামিম কামরুল হক তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন:

রুচির দুর্ভিক্ষ– কথাটা জয়নুল আবেদিন বহু বছর আগেই জোরের সঙ্গে বলেছিলেন। তিনি স্বয়ং দুর্ভিক্ষের ছবি এঁকেছিলেন। রুচির দুর্ভিক্ষে-র সঙ্গে ভাতের কথা বলা, এটিলিজমের কথা বলা —এক ধরনের বাজে তর্ক ছাড়া কিছু না। মামুনুর রশীদ যা বলেছেন সেটিকে পুরো সমর্থন করি।

লেখক ও প্রকাশ ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন:

রুচির দুর্ভিক্ষ নাকি সংস্কৃতির? মামুনুর রশীদ বনাম হিরো আলম। সংস্কৃতি কি বাঁচবে সখা? `রুচির দুর্ভিক্ষ’ না বলে `সংস্কৃতির দুর্ভিক্ষ’ বললে বরং ভালো করতেন একুশে পদক পাওয়া আমাদের নাট্যকার মামুনুর রশীদ। ‘রুচি’ ব্যাপারটা ব্যক্তিগত এবং ‘সংস্কৃতি’ ব্যাপারটা শুধু ব্যক্তিগত নয়। তবে ‘রুচি’ যত অনায়াসে আমরা ব্যবহার করি, ‘সংস্কৃতি’ ততটা করি না। মামুনুর রশীদও তাই করেছেন হয়তো।

অনলাইন একটিভিস্ট অমি রহমান পিয়ালের স্ট্যাটাস

 

মামুনুর রশীদ হিরো আলমের নাম যেভাবে ব্যবহার করেছেন তা হিরো আলমের জন্য কিছুটা অবমাননাকর তো অবশ্যই। তবে আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান উন্মাদেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে মামুনুর রশীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তা আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন বর্ষীয়ান ব্যক্তিত্ব, যিনি নাকি নিজের ভাবনা-চিন্তা অনুযায়ী নিজের দেশ-সমাজের জন্য সারা জীবন অবদান রেখেছেন তাঁর জন্য আরও বেশি অবমাননাকর। অবশ্য এটা তাদের কিছু রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক অবদমনেরও বহিঃপ্রকাশ।

হিরো আলম আমাদের জনরুচির পণ্য। তিনি জনবিনোদনের উপাদান। দীর্ঘ জীবন জনরুচির টিভি নাটকে কাজ করেছেন মামুনুর রশীদ। জনরুচি উন্নত করার সংগ্রামও করেছেন তিনি। আবার জনরুচি বা জনসংস্কৃতির উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত বা অপব্যবহৃতও হয়েছেন। তিনিও ব্যাপারটা ভালো করেই জানেন। হিরো আলম আমাদের সময়ে বিনোদনের বিবেচনায় স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ানের চেয়েও বেশি কিছু। প্রাচীন রোমে হিংস্র পশু কিংবা হিংস্রতম কোনো অপরাধীর সঙ্গে দাস, প্রান্তিক কিংবা অন্যায় সাজাপ্রাপ্ত কোনো গ্ল্যাটিয়েটরকে লড়তে লড়তে মরতে দেখে মানুষ যে আনন্দ পেত হিরো আলম আমাদের এখনকার মানুষের কাছে সেই আনন্দ। সেই গ্ল্যাটিয়েটরের প্রতি যে সহানুভূতি ও করুণা থাকত দর্শকদের, আমাদের আজকের হিরো আলমের প্রতিও তাদের আছে সেই সহানুভূতি ও করুণা। হিরো আলমের যারা দর্শক ও পক্ষাবলম্বী শিক্ষিত রুচির মানুষ, তারা কিন্তু মুক্ত মাধ্যমের এই দুনিয়ায় হিরো আলমের ভূমিকায় নামবেন না, কারণ তা তাদের রুচিতে বাধবে। তবে তারা হিরো আলমের ক্যারিকেচার উপভোগ করবেন।

আমাদের দেশেও একটা দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটেই শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে মামুনুর রশীদদের উত্থান হয়েছিল। ১৯৬০ এর দশকে তাঁরা যখন নাটক লিখছেন বা থিয়েটার করছেন তখন তাঁদের আর বয়স কতই-বা। তখন এক ধনের সাংস্কৃতিক শূন্যতা দেখা দিয়েছিল এবং সেই শূন্যতার মধ্যেই জেগে উঠা মুখগুলোর একজন মামুনুর রশীদ। হিরো আলম ও রুচির দুর্ভিক্ষ ইস্যুতে মনে পড়ছে, তাই জিজ্ঞেস করি: যে ধরনের সাংস্কৃতিক শূন্যতার মধ্যে মামুনুর রশীদদের মামুনুর রশীদ হয়ে ওঠা, এখনকার পরিস্থিতিতেও তেমন কোনো কিংবা ভিন্ন কোনো সাংস্কৃতি শূন্যতা তৈরি হয়েছে কি না? হয়ে থাকলে তা কোথা থেকে কীভাবে তৈরি হয়েছে এবং সেই শূন্যতা পূর্ণ করার উপায় কী?

মামুনুর রশীদ তাঁর বক্তব্যে (দেখুন ২৬ মার্চ ২০২৩ এর প্রথম আলোর শিরোনাম ‘রুচির দুর্ভিক্ষে হিরো আলমের উত্থান: মামুনুর রশীদ’) শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন, দেশে একটা রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। আমরা সেই রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেছি।’ পঞ্চাশের যে মন্বন্তরের কথা বলছিলাম সেই মন্বন্তরের প্রজন্ম শিল্পাচার্য জয়নুল। তাঁর ছবিতে এই মন্বন্তর বা দুর্ভিক্ষ যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে তা আর কারো চিত্রকলায় নেই। তিনি যে ‘রুচির দুর্ভিক্ষের’ কথা বলেছিলেন সেটিও কিন্তু আসলে ‘সংস্কৃতির দুর্ভিক্ষ’ বোঝাতেই বলা।
বিখ্যাত মার্কিন লেখক ওয়াল্টার মোজলে (কিছুটা রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির) ২০০৬ সালের ২৩ অক্টোবর একটি কলাম লিখেছেন ‘দ্য নেশন’ পত্রিকায় ‘কালচারাল ফ্যামেন: অ্যা সাইকেল’ শিরোনামে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘মানুষ যখন জীর্ণ-শীর্ণ হতে হতে মারা যায়, সেই দুর্ভিক্ষ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। কিন্তু অন্য ধরনের দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও আছে: মানুষের আত্মার দুর্ভিক্ষ। সংবেদনের এই বিরান শূন্যতা, এই আধ্যাত্মিক দুর্ভিক্ষ আজ আমাদের দেশের লোকেদের মধ্যে এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশের মানুষের মধ্যে পুরোদমে চলছে। আশাহীনতা, শূন্যতা এবং বিবেক ও বোধহীন উন্মাদনা (সিনিসিজম—শিল্প, নান্দনিকতা, সংস্কৃতি ইত্যাদির প্রতি ঘৃণা) আমাদের অনেকের হৃদয়ে বাসা বেঁধে নিয়েছে। আমরা ধনসম্পদে পরিবেষ্টিত এবং মানব ইতিহাসের মধ্যে অতুলনীয় সম্ভাবনায় আশীর্বাদপুষ্ট হয়েও ধীরে ধীরে জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে যাচ্ছি।’

আহমাদ মাযহারের শেয়ার করা রাখাল রাহার স্ট্যাটাস

 

সমাজ, দেশ, কাল, অর্থনীতি, রাজনীতি ও বিশ্বপরিস্থিতির প্রভাবে যে সংস্কৃতি গড়ে ওঠে সেই সংস্কৃতির এই গোটা ব্যাপারের মধ্যে ব্যক্তির আর্থিক ও আত্মিক বিকাশ তথা ব্যক্তির ব্যক্তিগত অবস্থানের ওপর নির্ভর করেই তৈরি হয় তার ব্যক্তিগত রুচি। আমরা এও জানি যে, রুচি মিলে মিলেই গড়ে ওঠে সংস্কৃতি আর সংস্কৃতি থেকেই বেরিয়ে আসে ব্যক্তিগত রুচি।

হিরো আলমের ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ আমাদের যে মান-সংস্কৃতির বিবেচনায়, যে মান-সংস্কৃতি তৈরি করতে ভূমিকা রেখেছেন মামুনুর রশীদেরা, সেটি মামুনুর রশীদদের হাত থেকে বেহাত হয়ে কোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির মদদদার হয়ে উঠেছে কি না এবং একটি সংস্কৃতি-অভিজাত শ্রেণীর ডান্ডায় পরিণত হয়েছে কি না সেদিকে আমাদের নজরদারি কই? কিংবা সেদিকে আদৌ নজর দেওয়ার দরকার আছে কি না? বিশ্বজনরুচি বা জনসংস্কৃতি নিয়ে দুনিয়ার পুঁজিকাঠামো যে হৈ হুল্লোড়ে মেতেছে, যেভাবে টাকা কামিয়ে নেওয়ার মচ্ছবে মেতেছে তা থেকে নিদান লাভের কোনো উপায় কি কোনো একজন ব্যক্তি বা ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদের আছে? মামুনুর রশীদ তো দূরের কথা কোনো একটি দেশ বা রাষ্ট্রেরই কি আছে সেই সামর্থ্য ও সক্ষমতা?

[অবিশেষ দ্রষ্টব্য: এই লেখাটায় সংস্কৃতি বিনির্মাণ, বিশ্বব্যবস্থা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সরকার, রাজনীতি ইত্যাকার কিছু কিছু বিষয়ে সরাসরি কিছু না বলে কেবল ইঙ্গিত দেওয়া হলো মাত্র। কিছু ইঙ্গিত বোঝে নেওয়ার ব্যাপারটা নির্ভর করবে, প্রিয় পড়ুয়া, আপনার বোঝ-বিবেচনার ওপর। পড়ে দেখেন, কোন ইশারা আপনার কাফি আর কোনটা নয়।