সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ও চিটাগং ইউনিভার্সিটি এক্স জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক। বক্তারা বলেছেন, ‘আজ আমরা বিচার চাইতে আসিনি। কারণ আমরা জানি কোনো বিচার পাব না। আমরা এসেছি শুধু নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে। আমরা যেমন লিখতে জানি, তেমন প্রতিবাদও জানাতে জানি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। একাধিকবার সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও বিচারের ব্যাপারে প্রশাসনের উদাসীনতার প্রতিবাদেই আজকের এই মানববন্ধন বলে জানানো হয়।
চবিসাসের সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমুর সঞ্চালনায় ও সভাপতি মাহবুব এ রহমানের সভাপতিত্বে এই মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে চবিসাসের সাবেক সভাপতি ও সিইউজেএন এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক বলেন, ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়ার পর গত এক যুগে আমরা এখানে বিভিন্ন প্রোগ্রামে এসেছি। কিন্তু গত কয়েক মাসে আমাদেরকে সাংবাদিক নির্যাতনের মতো ঘটনায় বেশ কয়েকবার আসতে হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। তাই, আজ আমরা আর বিচার চাইতে আসিনি। কারণ আমরা জানি কোনো বিচার পাবো না। আমরা এসেছি শুধু নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাতে।
সিইউজেএন এর সভাপতি, চবিসাসের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক আমাদের সময়ের চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ হামিদউল্লাহ বলেন, এই ক্যাম্পাসে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ব্যবহার করে ছাত্রলীগ নৈরাজ্য চালাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে ব্যবহার করে নিয়োগ থেকে ধরে সকল অনিয়ম এরা করছে। শিবির থেকে ছাত্রলীগ কারও চরিত্র পরিবর্তন হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এরকম প্রতিবাদে আমরা আর দাঁড়াতে চাই না। আগামীতে আর বিচার চাইব না। কর্তৃপক্ষের সামনে গিয়ে দাঁড়াবো।
চবিসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক আজকের পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ ও সিইউজেএন এর সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ বলেন, বিগত দু’বছরে ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের ওপর বেশ কয়েকবার হামলা হয়েছে। তাও কোনো বিচার হয়নি। হামলাকারীরা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মানবিক আচরণ পেয়েছে। মনে রাখবেন, আমরা লিখতে যেমন জানি, প্রতিবাদ জানাতেও জানি।
চবির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক খন্দকার আলী আর রাজি বলেন, মারজান আক্তার, দোস্ত মোহাম্মদ, মোশাররফ শাহ- একে একে আমাদের বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন। প্রশাসন নূন্যতম দায়িত্ব পালন করেনি। আমার মনে হয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বরং খুশি হয়েছে সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায়। কারণ, সাংবাদিকরা প্রশাসনের বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়ম তুলে ধরছে। এ সবকিছুর পেছনে অন্যতম কারণ হলো- এখানে ভিসি, প্রো-ভিসি হঠাৎ করে নাজিল হয়। দলীয় লেজুড়বৃত্তির পরিবর্তে যদি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে প্রশাসনের দায়িত্ব পেতো, তাহলে তাদের দায়বদ্ধতা থাকতো। আমরা হামলাকারীদের বিচার না শুধু, প্রশাসনেরও নিয়মতান্ত্রিকতা চাই।
সভায় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ডেইলি স্টারের ব্যুরো চিফ শিমুল নজরুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের দলাদলি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, উনারা এখন আর কথা বলতে এবং ব্যবস্থা নিতে সাহস পান না। আপনারাই ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জন্য এই উশৃংখলদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। একদিন তারা আপনাদেরও মাথা ভেঙে দিবে। সেদিনও আমরা লিখবো।
সমকালের রিজিওনাল এডিটর সারোয়ার সুমন বলেন, এই ক্যাম্পাসের সাথে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে। এখানে আমরাও সাংবাদিকতা করেছি। কিন্তু এমন মেরুদণ্ডহীন, নির্লজ্জ প্রশাসন আমরা কখনও দেখিনি। মারজান আক্তারের ঘটনায় কয়েক দফায় তদন্ত কমিটি করেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
তিনি উপাচার্যের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি বেশিদিন এ চেয়ারে থাকতে পারবেন না। তবে সম্মানের সাথে যাবেন কি-না সেটা আপনার সিদ্ধান্ত। ছাত্রলীগের মাথা না হয়ে সকল শিক্ষার্থীর মাথা হোন। এমন শাস্তির ব্যবস্থা করুণ, যাতে ভবিষ্যতে কেউ সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলার সাহস না পায়।
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পাসে গণমাধ্যম কর্মীরা সবসময় হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। মোশাররফের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে। প্রতিবারই সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের নামকাওয়াস্তে শাস্তি হয়েছে। প্রশাসন যদি ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয় তবে বুঝে নিব তারা হামলাকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এমনও দেখেছি, সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা বহিষ্কার হয়েও পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। প্রশাসনের মদদ ছাড়া এটা অসম্ভব। আজকে শিক্ষকরাও তাদের দায়িত্ব পালন ব্যর্থ। গণমাধ্যমকর্মীরা এ জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আজকে অছাত্ররা হল ত্যাগ করেছে কি-না, প্রশাসনকে সেই প্রশ্নও করুন।