বাংলাদেশের ২০২৪ সালের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভিসা স্যাংশন নীতি,অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপসহ নানা ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্টের সাথে দেশের রাজনীতিতে শীতল সম্পর্ক বিরাজ করলেও ব্যবসা বাণিজ্যে দেখা যাচ্ছে উষ্ণ অবস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে এফডিআই স্টক দাঁড়িয়েছে ২১ দশমকি ৮২৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে তিনটি দেশ। দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং যুক্তরাজ্য। তিন দেশেরই বাংলাদেশে বিনিয়োগ মোট এফডিআইয়ের ৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশে মোট বিদেশি বিনিয়োগের ১৮ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯৪৮ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম খাতে। দেশটির শেভরন একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি গ্যাস সরবরাহ করছে।
বিদেশি রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশে পাঁচটি খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করে। এগুলো হলো বিদ্যুৎ, টেক্সটাইল, গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম, ব্যাংক এবং টেলিকমিউনিকেশন খাত। সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আসে বিদ্যুৎ খাতে। গত অর্থবছর শেষে এই খাতে বিনিয়োগ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯৫১ বিলিয়ন ডলার, যা মোট বিনিয়োগের ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ। টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ দশমিক ৮০৫ বিলিয়ন। গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম খাতে ৩ দশমিক ৭৪৫ বিলিয়ন। ব্যাংক খাতে ২ দশমিক ৭৯৩ বিলিয়ন এবং টেলিকমিউনিকেশন খাতে ১ দশমিক ৩১১ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য মার্কিন উদ্যোক্তাদের কাছে পাঁচটি আকর্ষণীয় খাত রয়েছে। এগুলো হলো জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) ও আতিথেয়তা। বাণিজ্যিক অবকাঠামো, পরিবহন খাতেও বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া এখানে অনেক মার্কিন লজিস্টিক কোম্পানি (উৎপাদনস্থল থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পণ্যের ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ ও জাহাজীকরণ) কাজ করে।
তবে বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে একক আধিপত্য যুক্তরাষ্ট্রের। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় দেশে মার্কিন কোম্পানি বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে মনে করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে মার্কিন কোম্পানিগুলোর আগ্রহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করতে মার্কিন কোম্পানি ইতিমধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে। বর্তমানে দেশের জ্বালানি খাতে মার্কিন কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ প্রায় ৬০ শতাংশ। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। মার্কিন কোম্পানি শেভরন দেশীয় গ্যাসের ৬৪ শতাংশ সরবরাহ করছে।
বিদ্যুৎ খাতে উপমহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেক্ট্রিকের (জিই)। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সাল থেকে ১৫ বছর এলএনজি সরবরাহ করবে কোম্পানিটি। এক্সিলারেট ২০২৬ ও ২০২৭ সালে বছরে সাড়ে ৮ লাখ টন এবং পরবর্তী সময়ে ১০ লাখ টন করে এলএনজি সরবরাহ করবে বাংলাদেশকে। প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম হবে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামের ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশের সঙ্গে দশমিক ৩৫ ডলার।
বাংলাদেশের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) খাতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। মার্কিন কোম্পানিটি বর্তমানে মহেশখালীতে সমুদ্রে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) পরিচালনা করছে। এই টার্মিনালের সক্ষমতা ২০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। এলএনজি আমদানির পর তা রূপান্তরের মাধ্যমে গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়। মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে পেট্রোবাংলার সঙ্গে এক্সিলারেট এনার্জি চুক্তি করেছিল ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই। নির্মাণ শেষে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট গ্যাস সরবরাহ শুরু করে কোম্পানিটি। এই টার্মিনালে বর্তমানে দিনে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস রূপান্তর করা যায়। গতকাল স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে, এফএসআরইউর এলএনজি রূপান্তরের সক্ষমতা আরও ১০ কোটি ঘনফুট বাড়িয়ে দৈনিক ৬০ কোটি ঘনফুট করা হবে।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিনি,সয়াবিন তেল ও সার কিনছে বাংলাদেশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃক আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকেনটুয়েট টেকনোলজি ইনক থেকে স্থানীয় ওএমসি লিমিটেডের মাধ্যমে ৬৬ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকায় কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।