চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

উবারের মতো উদ্যোগ ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার সঙ্গে প্রয়োজন সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী ও নীতিমালা

দক্ষিণ এশিয়ার ৩৩তম শহর হিসেবে রাজধানী ঢাকাতে যাত্রা শুরু করেছে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ‘অন ডিমান্ড’ ট্যাক্সিসেবা প্রতিষ্ঠান উবার।  বিশ্বের ৪৫০টির বেশি শহরে উবারের সেবা কার্যক্রম চালু আছে। ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে উবার এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও আকর্ষনীয় স্টার্ট-আপ। ব্যস্ত ও জনবহুল রাজধানীতে যাদের নিজস্ব গাড়ি নেই এবং দেশের নিয়ন্ত্রণহীন ট্যাক্সি-সিএনজি সেবা পেতে ব্যর্থদের জন্য সুসংবাদ হিসেবে এসেছে উবার। সেসঙ্গে রাজধানী ঢাকা টেক দুনিয়ার ‘স্টার্ট-আপ’ বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মনোযোগও আকর্ষন করেছে এই উবারযাত্রা। সার্চইঞ্জিন জায়ান্ট ‘গুগল’-এর বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু ও নীরবে চলে যাওয়াতে গণমাধ্যম যতটা না সরব ছিল, উবার আসাতে বিশ্ব ও দেশের গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যম তার চেয়ে বেশি সরব। বিগত বছরগুলোতে দেশের টেলিকম-ইন্টারনেট খাতে গ্রাহক, বিনিয়োগ ও কার্যপরিধি বেড়ে যাওয়াতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রযুক্তি ও সেবাধর্মী মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির আগ্রহের জায়গা হয়েছে বাংলাদেশ। তবে দেশীয় উদ্যোগগুলো মাল্টি-মিলিয়ন ডলারের সঙ্গে কতোটুকু প্রতিযোগিতা করতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। উদাহরণ হিসেবে তারা দেশের সবচেয়ে লাভজনক টেলিকমখাতের বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের কথা বলে থাকেন, এই খাতের সিংহভাগ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের হাতে। বড় পুঁজি আর নীতির কাছে এসব খাতে টিকতে পারছে না দেশীয় উদ্যোক্তারা। আরেকটি বৃহৎখাত তৈরি-পোশাক শিল্পকেও বিদেশী বিনিয়োগ অনেকটা নীরবে দখল করে নিচ্ছে। উবারের মতো মাল্টি-মিলিয়ন ডলারের কোম্পানিগুলো যখন বাজার দখল ও প্রতিযোগীদের ড্রাই-আউটের জন্য শত শত মিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দিতে থাকে, তখন সেসব খাতের দেশীয় উদ্যোক্তাদের টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, উবার আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে তাদের সেবার পরিধি বাড়াতে ও বাজার আয়ত্ত্বে নিতে শত শত মিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। উবারের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ মন্ত্রীপর্যায় থেকে বিভিন্ন মন্তব্য ও মতামত পেয়েছে। সম্পূর্ণ মোবাইলঅ্যাপ ভিত্তিক এই সেবায় ড্রাইভার নেটওয়ার্ক, গাড়ি নির্বাচন পদ্ধতিতে রয়েছে যথেষ্ট সাবধানী পদক্ষেপ। তারপরও ভারতে এক উবার ড্রাইভারের ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে তোলপাড়, নিষিদ্ধ হওয়ার পরে আবার খোলা এবং জার্মানির আদালতে উবার সাময়িক নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়গুলো সাবধানতার সঙ্গে মাথায় রাখা দরকার। উদ্যোক্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নীতিনির্ধারকসহ সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে উবারের মতো আন্তর্জাতিক সেবা নাগরিক জীবনে স্বস্তি বয়ে নিয়ে আসতে পারে। বিদেশী বিনিয়োগ ও সেবার মডেল দেশের সার্বিক উন্নয়ন ঘটায় এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, সেসঙ্গে প্রতিযোগিতা ও সেবাদাতাদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনেও সহায়তা করে থাকে। তবে দেশীয় উদ্যোগ যাতে ঝুঁকিতে না পড়ে, মিলিয়ন ডলার ভর্তুকির কাছে হারিয়ে না যায় দেশের বাজার, সেজন্যও সরকারের প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও নিয়মিত মনিটরিং থাকা জরুরি।