উৎসব অনুষ্ঠানে সেরা রাজধানীর পুরান ঢাকা। পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে ঐতিহ্যের সকল সংস্কৃতি পালনে অনন্য রাজধানীর এই প্রান্ত। বায়ান্নো বাজার তেপ্পান্ন গলির শহরে অন্যান্য উৎসবের মধ্যে সাকরাইন অন্যতম। এবছর ১৪ জানুয়ারি ও ১৫ জানুয়ারি পালন করা হচ্ছে সাকরাইন উৎসব।
এই উৎসবকে ঘিরে শহরের প্রত্যেকটি অলিগলিতে জমেছে সাঁজের মেলা। রং বেরংয়ের বাতি, ঝালর, ঘুরি উড়িয়ে উদযাপন করছে দিবসটি।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুরান ঢাকায় বিভিন্ন অলিগলিতে সাকরাইন উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। বাসার ছাদে গান বাজনার আয়োজনের মাধ্যমে ঘুড়ি উড়িয়ে দিনটিকে আনন্দ মুখর করছে স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরান ঢাকায় পৌষের সকালের শীত ও কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশকে ভেদ করে বাহারি রঙের ঘুড়িতে ছেয়ে গেছে পুরো আকাশ। পরিবারের ছোট-বড় সবাই মিলে মেতেছে সাকরাইন ঘুড়ি উৎসবের আমেজে। সাকরাইন ঘুড়ি উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দৃশ্য হচ্ছে ঘুড়ি কাটাকাটির খেলা, যা সকাল থেকে শুরু করে সাধারণত বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে।
সাকরাইন বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী উৎসবগুলোর একটি। বাংলা মাঘ মাসের প্রথম দিনকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি পালন করলেও পুরান ঢাকার বাসিন্দারা দিনটিকে পালন করে সাকরাইন হিসেবে। মূলত ঘুড়ি উৎসব নামেই এটি বহুল প্রচলিত। দিনব্যাপী নানান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাসিন্দারা উৎসবটি পালন করে।
সাকরাইন উপলক্ষে পুরান ঢাকার প্রতিটি বাসা বাড়ির ছাদ সাজানো হয়েছে বাহারি রঙের আলোকসজ্জায়। সকাল থেকেই উচ্চস্বরে বাজানো হচ্ছে গান-বাজনা। সেই সঙ্গে রয়েছে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের সাথে হালের ডিজে পার্টির আয়োজন। বাড়িতে বাড়িতে চলছে পিঠা তৈরির ধুম। পরিবারের সকল সদস্য নতুন পোশাক পরিধান করে উদযাপন করছে ঘুড়ি উৎসব।
এদিকে, গতকাল রাত থেকেই পুরান ঢাকার অলিগলি রূপ নিয়েছে উৎসবের আমেজে। সাকরাইন উপলক্ষে তরুণ-তরুণীরা সেজেগুজে বাহারি অলংকার পরিধান করে সহপাঠীদের নিয়ে যাচ্ছে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। অনেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছেন নিজেদের মতো সময় কাটানোর জন্য।
পুরান ঢাকার কলতাবাজার এলাকার স্থানীয় এক বাসিন্দা হাসিবুল তালেব। তিনি সাকরাইন উৎসব সম্পর্কে বলেন, ‘আনন্দ উৎসবের জন্য দিনটি আমরা পালন করে থাকি। এই উৎসবের দুটো দিক আছে। একটি ধর্মীয় অপরটি সাংস্কৃতিক। তবে আমরা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সাংস্কৃতিকভাবে দিবসটি উদযাপন করি। আমাদের পূর্বপুরুষদেরও এই উৎসব পালন করতে দেখেছি। তাদের থেকেই আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি।’
উল্লেখ্য, সাকরাইন উৎসব বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যগুলোতেও ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনায় ধুমধামের সাথে পালন করা হয়। সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষের মেলবন্ধনের উৎসব হিসেবেও সাকরাইনের রয়েছে বিশেষ খ্যাতি।