রাজধানীর শাজাহানপুরে মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব বলছে, কম দামে মাংস বিক্রি করায় মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা খলিলুর রহমান ও ন্যায্যমূল্যে মাংস বিক্রেতাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। গত ১৮ জানুয়ারি খলিলকে ফোন করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এ ছাড়া কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে দুই দিনের মধ্যে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর শাহাজাহানপুর থানায় খলিলুর রহমানের করা একটি সাধারণ ডায়েরি ( নং-৮১৩) প্রেক্ষিতে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) গভীর রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-৩ ও র্যাব-৪ এর যৌথ অভিযানে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, ঢাকার আশুলিয়ার মো. নুরুল হক (৬৭) ও পাবনা সদর থানার মোহাম্মদ ইমন (২২)।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, সম্প্রতি কিছু মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী অন্যায়ভাবে গরুর মাংসের মূল্যবৃদ্ধি করে মাংসের বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে গত ১৯ নভেম্বর থেকে রাজধানীর শাজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিল তার ‘খলিল গোস্ত বিতানে’ ৫৯৫ টাকায় প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ রাজধানীতে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
এরপর থেকে খলিলের দেখাদেখি আরও কিছু মাংস ব্যবসায়ী প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি করে আসছেন। পরবর্তীতে গত ২২ ডিসেম্বর ভোক্তা অধিদপ্তর, মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্মিলিত বৈঠক করে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। এমন সিদ্ধান্তে বাজারে স্বস্তি ফিরে আসে।
এ সময় যেসব মাংস ব্যবসায়ী ন্যায্যমূল্যে মাংস বিক্রি করেন, মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকেন। এছাড়াও কিছুদিন আগে রাজশাহীর বাঘার আড়ানী হাটে ন্যায্যমূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করায় একজন মাংস ব্যবসায়ী খুন হন।
কমান্ডার মঈন বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানের মোবাইলে একটি নম্বর থেকে কল করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাকে ও তার ছেলেকে দুই দিনের মধ্যে গুলি করে হত্যার হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করা হয়।
র্যাব বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দুজন দায় স্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তার নুরুল হক দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়া থানার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকায় ডিশ ও ইন্টারনেটের ব্যবসা করতেন। পরিচিত এক ব্যক্তি তাকে খলিলকে ফোনে হত্যার হুমকি দিতে বলেন। বিনিময়ে তিনি ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায় ঠিক করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। নুরুলের কথামতো খলিলকে ফোনে হুমকি দেন ইমন।
গ্রেপ্তার নুরুলের নামে ঢাকার আশুলিয়া থানায় হত্যার হুমকি, চাঁদাবাজি, মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে চারটির বেশি মামলা রয়েছে বলে জানায় র্যাব। ইমন দীর্ঘদিন ধরে নুরুলের ডিশের ব্যবসার কাজে সহায়তা করতেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন: নুরুলের সঙ্গে স্থানীয় কিছু মাংস ব্যবসায়ীদের পরিচয় রয়েছে। তাদের বিষয়েও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। খলিলকে হুমকি দেওয়ার পেছনে শুধুই নুরুলের প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো নাকি মাংস ব্যবসায়ীদের কোনো যোগসাজশ রয়েছে, এটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।