নরসিংদীতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
আজ শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোকন চন্দ্র সরকার। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে নরসিংদী আদালতে পাঠানো হয়।
তার গ্রেপ্তারের খবরে নরসিংদী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে ভিড় জমান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় রিমনের মুক্তির দাবিতে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। স্লোগান দিতে দিতে তারা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে পড়লে পুলিশ তাদেরকে কার্যালয় থেকে বের করে দেয়।
এর আগে, গত ২৯ নভেম্বর বুধবার দুপুরে নরসিংদী ক্লাবে নরসিংদী সদর-১ আসনের আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে হুমকিস্বরুপ বক্তব্য দেন ছাত্রলীগ সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন।
বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোনো স্বতন্ত্র-মতন্ত্র চিনে না। মাইরের ওপর কোনো ওষুধ নাই। পোলাপাইনও জানে কীভাবে পিটাইতে হয়। কোনো স্বতন্ত্র-মতন্ত্র ছাত্রলীগ মানে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কীভাবে পিটাইতে হয় হে ওই আমগরে শিখাইছে, হেরে আমরা হেমনেই পিটাইমু। এই আসনের কোনো এলাকায় তাদের জায়গা দেওয়া যাবে না।’
এছাড়াও বক্তব্যে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও উস্কানীমূলক কথাবার্তা বলেছেন তিনি। বক্তব্য দেয়ার পর পরই তার বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং বেশকিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।
পরদিন ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে দেয়া বক্তব্য আমলে নিয়ে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সদস্য ও যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদলতের বিচারক নাহিদুর রহমান নাহিদ স্বাক্ষরিত একটি পত্রে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়। ওই দিন রাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে নরসিংদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার দুপুরে ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার হয়।
বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে তাকে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা শাখা থেকে আদালতে নেয়া হয় তাকে। এসময় ছাত্রলীগের কয়েকশত নেতা-কর্মী আদালতের গেইটের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং সেখানে সড়কের মধ্যে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
মামলার বাদী সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমনের দেওয়া এই হুমকিতে আসনটির সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কিত হয়ে ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকতে পারেন। যা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী সুস্পষ্ট অপরাধ। তাই নির্বাচন কমিশন ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতিক্রমে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম তার বক্তব্যে যে হুমকি দিয়েছেন, তা নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী আইন ভঙ্গের সামিল। এই ঘটনায় গতকাল রাতে মামলা হওয়ার পর আজ দুপুরেই তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চায়। যারাই এর অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবেন, তিনি যেই হোন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।