এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
কুষ্টিয়ার আরোয়া পাড়ায় বেড়ে উঠা আদনান প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শুচ্ছ ‘এ’ ইউনিটের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কেন্দ্রে অংশগ্রহন করেছেন।
জানা যায়, এক ভাই এক বোনের মধ্যে বড় আদনান। বাবা আসগর আলী ও মা সাবিনা সুলতানা দুই জনেই বেসরকারি চাকরিজীবী। জন্মগত ভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার আদনান। জন্মের ১৮ মাস পর বসতে শিখলেও হাটাঁচলা শিখতে লেগেছে প্রায় ৯ বছর। মায়ের চেষ্টায় শেষ করেছেন প্রাইমারি ও হাই-স্কুলের গন্ডি।
স্বপ্ন ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করে মায়ের মুখে হাসি ফোটাবার। কিন্তু পরীক্ষা ভালো হলেও হাতের কাঁপুনির কারণে বৃত্ত ভরাটগুলো সব ওএমআর পেপারের বাইরে চলে যাওয়ায় রেজাল্ট আসে অনুত্তীর্ণ। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ না হলেও উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) পড়ার স্বপ্ন দেখছে আদনান।
আদনান বলেন, লেখার ক্ষেত্রে আমি নিজের হাতেই লিখতে পারি কিন্তু বৃত্তভরাটের ক্ষেত্রে আমার সমস্যা হয়। তাই শ্রুতি লেখকের সাহায্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি। ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কিন্তু আমার হাতের কাঁপুনির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হাত ছাড়া হয়েছে। পরীক্ষা ভালো হওয়ার পরও হাতের কাঁপুনির কারণে বৃত্ত ভরাটগুলো সব বাইরে চলে গিয়েছিলো। যার ফলে তার রেজাল্ট অনুত্তীর্ণ আসে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রুতি লেখকেরও কোনো সুযোগ ছিলো না যে, যে আমি একটু সুবিধা পাবো। কিন্তু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে সেই সুযোগটা দিয়েছে। আমার ধারণা কম্পিউটার খাতা দেখার কারণে এরকম রেজাল্ট এসেছে। তবে এখনও আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলে খুশি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই আমাদের মতো শিক্ষার্থীরা যারা এমসিকিউ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তাদের খাতা কম্পিউটারের মাধ্যমে না দেখে শিক্ষকরা নিজ হাতে যদি দেখেন তাহলে আমাদের সুযোগ একটু বৃদ্ধি পায়।
আদনানের মা সাবিনা সুলতানা বলেন, মার কাছে সন্তান তো সন্তানই। অনেক কষ্ট করে আমার এই ছেলেকে নিয়ে এগিয়েছি। প্রাইমারি লেভেল পর্যন্ত ওকে কোলে নিয়েই স্কুলে গিয়েছি। এক হাতে ব্যাগ ছিলো আরেক হাতে আদনান। আমার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিলো ওকে আমার যেভাবেই হোক মানুষ করতেই হবে। আমরা যারা মা আছি তারা সন্তান অসুস্থতা থাকলেও তাদের সুস্থতাই দেখে। মা’ই হচ্ছে সন্তানের বড় শিক্ষক। একজন মা-ই সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে পারে।
তিনি বলেন, আদনান ১৮ মাস বয়সে বসতে শিখেছে আর ৯ বছরে হাঁটা। ও ছোট বয়সে হাঁটতে পারতো না, নড়াচড়া করতে পারতো নাহ, কথাও বলতে পারতো না। আমি ১৮ বছর ধরে একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেছি সেখানে ওর বেড়ে ওঠা। ওখানে প্রাইমারি লেভেল শেষ করে দ্বীনমণি হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করে। কলেজ জীবনে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে। ওর খুব শখ ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তবে ওর হাতের সমস্যার কারণে খাতা হয়তো বাতিল হয়ে গিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পরীক্ষা দেয়ার পর থেকেই সে আফসোস করছিলো যে পরীক্ষা ভালো হলেও হয়তো ভাগ্যে নেই। তবে আমরা চেয়েছিলাম ঢাবির ভিসি বরাবর একটি আবেদন দিতে যাতে ওর খাতাটা হাতে দেখা হয়। তারপরও আমি চাই যে আমার ছেলের যদি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে যায় তাহলে আমার তাতেই খুশি।