রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জরুরিভাবে কাজ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ নিরাপদে, স্বেচ্ছায় এবং টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করতে বিলম্ব করলে পুরো অঞ্চল ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
আজ ৭ সেপ্টেম্বর সকালে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা কনভেনশন সেন্টারে (জেসিসি) অনুষ্ঠিত ১৮তম ইস্ট এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন এবং তিন দিনব্যাপী ৪৩তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনের আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি একথা বলেন।
বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করতে আরও বিলম্ব ঘটলে এবং মানবিক সহায়তার ঘাটতি হলে পুরো অঞ্চলটি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। রাষ্ট্রপতি সুস্পষ্টভাবে বলেন, সঙ্কটের সাত বছরেও আজ পর্যন্ত এই বিষয়ে কোন সমাধান চোখে পড়েনি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের ৪৩তম শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতি এবং ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো আজকের এই ১৮তম ‘ইস্ট এশিয়া’ শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, সংলাপ অংশীদার, আসিয়ানের মহাসচিব, মন্ত্রী, সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং সংলাপ অংশীদারদের প্রতিনিধিগণ এতে অংশ নেন। চলতি মেয়াদে আসিয়ানকে প্রশংসনীয়ভাবে পরিচালনা করার এবং জাকার্তায় উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য রাষ্ট্রপতি জোটটির সভাপতি ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদোকে অভিনন্দন জানান।
এসময় রাষ্ট্রপতি আসিয়ানের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির এবং জোটটির সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, আমরা যদি আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনারের মর্যাদা পাই, তাহলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক বাজারে প্রবেশাধিকার, বর্ধিত আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা ও সংহতি এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে জনগণের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক শক্তিশালী হবে।
আসিয়ান এবং আইওআরএ’র মধ্যে সদ্য স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি এটিকে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ) একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ফোরামে বিকশিত হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এটি ছয়টি অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করেছে এবং আরও বেশি কিছুর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
সাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ তার সভাপতিত্বে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আইওআরএ’র একটি ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তিনি আশা করেন যে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আইওআরএ’র নিযুক্তি একটি ন্যায্য, ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করবে যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে।
রাষ্ট্রপতি তার লিখিত বক্তব্যের শুরুতেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ একটি রূপান্তরমূলক যাত্রা করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রায় সব ক্ষেত্রেই অসাধারণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
এদিকে অনুষ্ঠানের ফাঁকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তারা হলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন এবং লাও পিপলস ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকের প্রধানমন্ত্রী সোনেক্সে সিফানডোন। রাষ্ট্রপতি বিশ্ব নেতাদের সাথে আলাদাভাবে কুশল বিনিময় করেন ।