১১১ বছর আগে হিমবাহের সাথে ধাক্কা খেয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে গিয়েছিল ‘টাইটানিক’। মহাসাগরের প্রায় সাড়ে চার হাজার মিটার নীচে এখনও রয়েছে তার ধ্বংসাবশেষ। সম্প্রতি ওশানগেট নামক পর্যটন সংস্থা টাইটানিকের সেই ধ্বংসাবশেষ দেখাতে ৫ যাত্রী নিয়ে গিয়েছিল তাদের ‘টাইটান’ নামের সাবমেরিনে করে। যাত্রা শুরুর কিছুসময় পরেই নিখোঁজ হয়ে যায় সাবমেরিনটি। দীর্ঘ উদ্ধার অভিযান শেষে জানা যায় বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়েছে যানটি, আর এতে মারা যায় ভেতরে থাকা ৫ যাত্রী।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘটা সবচেয়ে অস্বস্তিকর ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে এর নিরাপত্তা নিয়ে এবং ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের অবশিষ্টাংশ দেখতে মানুষ কতটা গভীরে যায়।
বর্তমানে এই ধরণের ১০টি সামুদ্রিক যান রয়েছে যা পানির ৪০০০ মিটার বা তার বেশি গভীরতায় পৌঁছাতে পারে। এর মধ্যে একটি ছিল ওশানগেটের মালিকানাধীন ‘টাইটান’। পানির ৩ হাজার ৭০০ মিটার গভীরতায় টাইটানিক ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিপজ্জনক অভিযানগুলোর মধ্যে একটি। টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ৭৫ বছর পর আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষ এখন পর্যন্ত ২৫০ জনেরও কম মানুষ পরিদর্শন করেছেন।
তাদের মধ্যে একজন হলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা জেমস ক্যামেরন যার জাহাজডুবির প্রতি আগ্রহ তাকে ‘টাইটানিক’ বানানোর প্রেরণা জুগিয়েছিল। এটি ১৯৯৮ সালে সেরা ছবির ক্যাটাগরিতে অস্কার জিতেছে।
১৯৯৫ সালে, তিনি সাবমার্সিবল পাইলট ডঃ আনাতোলি সাগালেভিচ এবং একজন রাশিয়ান প্রকৌশলীর সাথে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনে যান। সেবার তারা অপ্রত্যাশিতভাবে সমুদ্রের তলদেশে বালির ঝড়ের মুখোমুখি হয়েছিল। এসময় প্রবল স্রোত যানটির পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ করে দেয় এবং তাদের ব্যাটারি প্রায় ফুরিয়ে যায়। তারা যাত্রাটি বাতিল করে ওপরে উঠতে চেষ্টা করে কিন্তু যানটি সমুদ্রের তলায় ডুবে যেতে থাকে।
ক্যামেরন এবং তার ক্রুরা আধা ঘন্টা অপেক্ষা করার পর আবারো ওপরে উঠতে চেষ্টা করে, কিন্তু যানটি মাত্র ৪০ ফুট দূরে গিয়ে থেমে যায়। তবে জলের স্রোত তাদের টাইটানিক থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর তারা ওপরে উঠতে সক্ষম হয়।
১৯৯১ সালে, কানাডিয়ান সমুদ্রের নীচের ড. জো ম্যাকইনিস একটি অভিযান পরিচালনা করেছিলেন ‘আইম্যাক্স ফিল্মে’র কিছু দৃশ্য ক্যাপচার করার জন্য। পুরো অভিযানের সময় দুটি রাশিয়ান সাবমেরিন ১৭ বার পানির নিচে ডাইভ দেয়। কিন্তু শেষ ডাইভ দেওয়ার সময় বাধে বিপত্তি।
শুটিং শেষে যখন তারা ওপরে উঠতে চেষ্টা করেছিলেন তখন বুঝতে পারেন যে যানটি কিছুর সাথে আটকে গেছে। পরে দ্বিতীয় একটি সাবমেরিন তাদের সাহায্য করতে এসে দেখতে পায় এর বাম দিকের ‘ল্যান্ডিং স্কিডটি’ তারের নীচে আটকে গেছে। তারপর দ্বিতীয় সাবমেরিনটি তাদের বেরিয়ে আসার উপায় সম্পর্কে নির্দেশনা দিতে থাকে।
২০০০ সালে মাইকেল গুইলেন নামক এক ব্যক্তি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু যখন তার সাবমেরিন
ওই জাহাজের সামনের অংশ এবং স্টার্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন গুইলেন বুঝতে পারেন যে তারা দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। ক্রুদের মতে, তারা গভীর সমুদ্রের অপ্রত্যাশিত স্রোতের সম্মুখীন হয়েছিল। পরে তাদের সাবমেরিনটি টাইটানিকের প্রপেলারের সাথে ধাক্কা খায়।
ওপরে উঠতে শুরু করার আগে তারা প্রায় এক ঘণ্টা গভীর সমুদ্রের তলদেশে আটক অবস্থায় সময় কাটিয়েছিল।
আরও পড়ুন: টাইটানিকের ধ্বংসস্থল যে কারণে এখনও বিপজ্জনক জায়গা