প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে দেশে সিগারেটের সহজলভ্যতা কমাতে হবে। আর এ জন্য আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ, ও প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য যথাক্রমে ৩৩ শতাংশ, ১৯ শতাংশ, ১৫ শতাংশ, এবং ১৩ শতাংশ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরা।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) ঢাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় তারা এ আহ্বান জানিয়েছেন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে আলোচনা সভায় আলোচনা করেন- ড. শ্রী বীরেন শিকদার, এমপি (মাগুরা ০২), তারানা হালিম, এমপি (মহিলা আসন ১৮), নাজমা আক্তার, এমপি (মহিলা আসন ৩৭), ড. জান্নাত আরা হেনরী, এমপি (সিরাজগঞ্জ ০২), ড. মো. আওলাদ হোসেন, এমপি (ঢাকা ০৪), এবং অনিমা মুক্তি গমেজ, এমপি (মহিলা আসন ২৯)।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে এই আলোচনায় বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন অধ্যাপক- ড. এম আবু ইউসুফ এবং ড. মুহাম্মদ সাহাদত হোসেন সিদ্দিকী। উন্নয়ন সমন্বয়সহ আরও কয়েকটি তামাক-বিরোধী সংগঠনের পক্ষে সিগারেটে কার্যকর কর আরোপের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী।
আলোচনা সভায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী শ্রী বীরেন শিকদার এমপি বলেন, তামাকের তিনটি পক্ষ রয়েছে। এই পক্ষ তিনটি হলো- উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী এবং ব্যবহারকারী। এই তিন পক্ষকেই নিরুৎসাহিত করতে হবে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এমপি বলেন, যত্রতত্র তামাক উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট আইন করে জরিমানার আওতায় আনতে হবে। ‘নো স্মোকিং জোন’-এর পরিধি আরও বাড়াতে হবে। তামাক ব্যবহারের কুফল জানাতে সমাজের বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিদের সামনে আনতে হবে। তিনি আরও বলেন, তামাক সেবন তরুণের কোনো ধরনের স্মার্টনেস নয়। একজন তরুণের স্মার্টনেস প্রতিফলিত হয় তার সততায়, তার স্বচ্ছতায়।
নাজমা আক্তার এমপি বলেন, কোম্পানীগুলো বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়ে তামাক চাষকে আরও বেশি উৎসাহী করে। এটি কমিয়ে আনতে কৃষকদের ভর্তুকি দিয়ে অন্য কৃষি ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করতে হবে।
ড. জন্নাত আর হেনরি এমপি বলেন, তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে অধিক করারোপের পাশাপাশি সচেতনতাও বাড়াতে হবে। একই সাথে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে হবে। পারিবারিক সচেতনতাও বাড়াতে হবে।
ড. আওলাদ হোসেন এমপি বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষ এবং কিশোর-তরুণদের সিগারেট ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেটে সিগারেটের খুচরা মূল্য বাড়ানো এবং এগুলোর ওপর বেশি বেশি করারোপের করতে হবে। এসডিজি-সহ জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। আর সে জন্য সিগারেটের ব্যবহার কমাতে বাজেটে যথাযথ উদ্যোগ থাকা বাঞ্ছনীয় বলে অভিমত দেন অনিমা মুক্তি গমেজ এমপি।
ড. আতিউর রহমান বলেন, সিগারেটে কার্যকর করারোপই এই ক্ষতিকারক পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে আনার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এ কারণেই দেশের তামাক-বিরোধী নাগরিক সংগঠনগুলো সিগারেটে কার্যকর করারোপের পক্ষ অবস্থান নিয়েছে। তবে সিগারেট ব্যবহার কমলেও যেন সরকারের রাজস্ব আয়ে বড় চাপ না পড়ে- সে বিষয়টি মাথায় রেখেই কার্যকর করারোপের প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। এই প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে একদিকে সিগারেট ব্যবহারের হার ৯ শতাংশ কমবে, অন্যদিকে সিগারেট বিক্রি থেকে আসা করের পরিমাণ ২৮ শতাংশ বাড়বে বলে জানান তিনি।