সিলেটের জৈন্তাপুরে আজ সোমবার ভোরে টিলাধসের পর একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যাওয়া এসব ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন নারী ও শিশু। আহত হয়েছে আরও পাঁচজন। তারাও ওই পরিবারেই সদস্য। মূলত টিলা থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নেয়াই এই মর্মান্তিক ঘটনার কারণ।
দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম এই ঘটনার খবর দিয়ে দাবি করেছে, ওই টিলাটির প্রায় অর্ধেক মাটি অবৈধভাবে কেটে নিয়েছে মাটি খেকোরা। তারপর গত তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে ধসের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পেছনে যে মাটি খেকোরা দায়ী, জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম দস্তগীর আহমদ নিজেও তা স্বীকার করেছেন ।
এমন মর্মান্তিক ঘটনা যেদিন ঘটলো, ঠিক তার আগের দিন পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলিয়ে বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। যার প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐক্যতানে টেকসই জীবন’। বছরজুড়ে নানাভাবে আমরা পরিবেশ রক্ষার ওপর জোর দিচ্ছি কিন্তু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড থেকে দেশকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছি। নির্বিচারে বৃক্ষনিধন করছি, পাহাড়-টিলা কাটছি। নদীর তলদেশ থেকে বালু-পাথর তুলে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করছি।
আমরা জেনেছি, জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ও হরিপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু পাহাড় ও টিলা এরই মধ্যে অবৈধভাবে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেসব এলাকায় আরও পাহাড় এবং টিলাধসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এই দুই ইউনিয়নেই শুধু যে এই চিত্র, তা নয়। সিলেট, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের অনেক এলাকাতেও হুবহু একই চিত্র।
বিশেষ করে শেষ দুই দশকে এসব এলাকায় অবাধে পাহাড় কাটা, টিলা কাটার ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে। তাও আবার প্রশাসনের নাকের টগায়। গত কয়েক বছরে তা না কমে আরও বেড়েছে। প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে এমন ঘটনা দেখে দেশের মানুষ। কখনও কখনও হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেলে টনক নড়ে প্রশাসনের। আবার এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যারা বসবাস করেন, তারাও অনেক সময় সচেতন না হয়ে নিজেদের জীবনকে হুমকিতে ফেলে। সব জেনেও তারা নিরাপদ স্থানে যেতে আগ্রহ দেখায় না।
আমরা মনে করি, প্রকৃতিকে তার মতো থাকতে না দিলে কিংবা অবাধে পরিবেশ ও প্রতিবেশকে হুমকিতে ফেললে এমন ঘটনা ঘটবেই। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিবেশ রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে।