“তোমায় দিলাম অযুত জারুল ফুল, তোমায় দিলাম হিজল ফুলের বন; রোজ নিশিথে একলা থাকার কালে, আমায় দিও খানিক তোমার মন।” – বাক্য দুটি বর্তমান সময়ের এক জনপ্রিয় লেখকের কবিতা থেকে নেয়া।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের জনপদ সিলেট। বড় ছোট পাহাড়, টিলা, সবুজ পাতার চা বাগান, নদ-নদী ও ঝরণাসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি এই সিলেট।
ষড়ঋতুর এই দেশে ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন সাজে সজ্জ্বিত প্রকৃতি। বর্তমানে গ্রীষ্মের এই ঋতুতে ফুল-ফলের ব্যপক সমারহ। সেই সঙ্গে গ্রীষ্মে প্রকৃতির নজরকাড়া আরেক সৌন্দর্য জারুল ফুল। প্রকৃতির এমনই এক সৌন্দর্য ধারণ করে সেজে উঠছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাস।
৩২০ একর জমির উপর নির্মিত এই ক্যাম্পাসে রয়েছে প্রায় ৪০০ জারুল গাছ। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে ফুটন্ত জারুল ফুল। ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে প্রিয় এক কিলোরোড।
আর এই কিলোরোডের পাশ দিয়ে ক্যাম্পাসে বয়ে গেছে প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুইটি কৃত্তিম লেক। লেকের দুইপাশ জুড়ে রয়েছে প্রায় শতাধিক জারুল গাছ। গ্রীষ্মের এই দিনে সকালে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে লেকের পাশে ফুটে থাকা জারুল ফুল। দুইপাশে লেক আর মাঝখানে কিলোরোড।
শুধু কিলোরোডই নয়, শাহপরান হলের রাস্তা এবং ছাত্রী হলের রাস্তায়ও দেখা মিলে জারুল ফুলের। এছাড়া ফুলের দেখা মিলে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের সামনের রাস্তা, সেন্ট্রাল ফিল্ডের প্রবেশমুখ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবেরও সম্মুখ এবং শিক্ষার্থীদের পরিচিত জায়গা নিউজিল্যান্ড এলাকাজুড়ে।
জারুলের এমন আতিথিয়তায় মুগ্ধ হয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসফিয়া ফারহানা ঐশী বলেন, ক্যাম্পাস জুড়ে এই ফুল সবারই নজর কাড়ছে প্রতিনিয়ত। জারুল ফুলের সৌন্দর্যের কথা কবি জীবনান্দ দাশ, কবি আহসান হাবীবসহ অনেক কবির কবিতায় ফুটে ওঠেছে। সব গাছে যখন ফুল আসে তখন একেবারে বেগুনী রঙ্গে ভরে যায় পুরো গাছ।
জারুলের এমন বিস্তৃতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভারনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোঃ রোমেল আহমেদ বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় ঋতু বদলের সাথে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বদল করে। জারুল সেই সৌন্দর্যেরই একটি অংশ। ক্যাম্পাস জুড়ে বিস্তৃত সব জারুল গাছ বাতাসে কেবল অক্সিজেনই ছাড়ছে না, বরং মুগ্ধ করে তুলছে তার অপার সৌন্দর্যে। ফুলটির ইংরেজি নাম “জায়ান্ট ক্রেপ-মির্টি” এবং বৈজ্ঞানিক নাম “লাগেরস্টোমিয়া স্পেসিয়োসা”। বৃক্ষটির আদি নিবাস শ্রীলঙ্কায়।
তিনি বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ জারুল। তবে বাংলদেশসহ চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে এই বৃক্ষের দেখা মেলে। গ্রীষ্মের শুরুতে এই ফুল ফোটে এবং তা শরৎ পর্যন্ত দেখা যায়। ফুল শেষে গাছে বীজ হয় ও বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। এই গাছ সাধারণত ১০ থেকে ১৫ মিটার উঁচু হয়। গাছটির নানা ভেষজ গুনাগুণ রয়েছে। যেমন-ডায়াবেটিস, জ্বর, অনিদ্রা, কাশি, অজীর্ণতায় অনেক উপকারী।