চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

নদী বাঁচাই, দখল কমাই

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। আর বাঙালি মাছে ভাতে বাঙালি। এটি সর্বজনবিদিত। নদী হলো মিষ্টি জলের একটি প্রাকৃতিক জলধারা বা ঝর্ণাধারা, বরফগলিত স্রোত অথবা প্রাকৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট হয়ে প্রবাহ শেষে সাগর, মহাসাগর, হ্রদ বা অন্য কোন নদী বা জলাশয়ে পতিত হয়। মাঝে মাঝে অন্য কোন জলের উৎসের কাছে পৌঁছানোর আগেই নদী সম্পূর্ণ শুকিয়ে যেতে পারে।

কিন্তু আমাদের নদীগুলোর অস্তিত্ব আজ বিলীন হওয়ার পথে। নদী দখল, নদী দূষণ, নদী সংযোগ পরিকল্পনাসহ বিবিধ কারণে নদীগুলো ও মাছসহ জলজপ্রাণী, প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্যহীনতাসহ নদীর প্রবাহ আজ ধ্বংসের পথে। এসব নদীগুলো একসময় জমিতে পরিণত হয়ে সেখানে ঘরবাড়ি তোলা হয়। নদী ভরাট করে রিসোর্ট করা হয়। নদী থেকে ড্রেজারে বালু উত্তোলন করে ব্যবসা করা হয়। নদীতে কলকারখানার বর্জ্য ফেলার ফলে মাছের প্রজনন নষ্ট হয়। অপরিচ্ছন্ন ও রাসায়নিক বর্জ্য নিষ্কাশনের কারণে নদীর মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। সেই সুযোগে মাছ বিক্রেতারা মাছের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তখন মাছ কিনে খেতে হিমশিম খেতে হয়। মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের জীবন ও জীবিকার সমস্যার কারণে উচ্চমূল্যে সব খাবার খেতে পারে না। ইলিশ মাছের দাম চরম পর্যায়ে, যা দুঃখজনক। কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে খুলনার সুন্দরবন পর্যন্ত উপকূলীয় জেলাগুলোতে নিষিদ্ধ মশারি জাল দিয়ে বাগদা চিংড়ির পোনা ধরার কাজ অব্যাহত থাকার কারণে ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননের জন্য বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

Bkash

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বৃষ্টির কারণে মে, জুন ও জুলাই মাসে সমুদ্রের পানি মিষ্টি হয়ে আসলে উপকূলরেখার কাছে অনেক ধরনের সামুদ্রিক মাছ ডিম পাড়ে। এছাড়া সাগরে ছাড়া ডিমগুলো লার্ভা ও পোনাতে পরিণত হওয়া পর্যন্ত মূলত ম্যানগ্রোভ বন এবং উপকূলীয় অঞ্চলে উপকূলরেখার কাছে থাকে। এ অবস্থায় চিংড়ি ও মাছের পোনা ধরার প্রক্রিয়াটি আসলে জলজ জীব-বৈচিত্র্যকেই বিপণ্ন করে। এরকম আরও উপকূলীয় জেলায় এভাবে মাছের পোনা ধ্বংস করছে।

সুন্দরবন বিশ্বখ্যাত যা বাংলাদেশের জন্য পরম গর্বের বিষয়। সুন্দরবনের তিনটি নদী মাইক্রোপ্লাষ্টিক এর ঝুঁকিতে রয়েছে। এখানকার জলজ উদ্ভিদ ধ্বংসের মুখে। হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মিরপুর বাজারে ময়লা ফেলার জন্য বাজারের মধ্য দিয়ে বয়ে ওয়াজোজনাল নদীতে অবাধে আবর্জনা ফেলা হয়। একাংশ ভরাট হয়ে নদীটি মরে যাচ্ছে। ময়লার স্তুপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নদী খনন করে স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় নদীগুলোর ভাঙন শুরু হয়েছে। তিস্তা নদীতে বর্ষায় পানি আসে। কিন্তু পানি যখণ নেমে যায় তখন ভাঙন শুরু হয়। বসতভিটা, কৃষিজমি বিনষ্ট হয়। আবার পানি না থাকলে নদীতে তো মাছও পাওয়া যায় না। তখন জেলেদের ঋণ করে সংসার চালাতে হয়। তাছাড়া নদীতে মাঝি নৌকায় লোক পারাপার করে, মালামাল পরিবহন করে জীবিকা নির্বাহ করে। নদী ভাঙ্গন ও ভরাটের কারণে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয় জনজীবনে। রংপুর অঞ্চলের দুঃখ ও দারিদ্রতার অন্যতম কারণ মনে করে তিস্তা নদীর প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে। নদীভাঙ্গনে বাস্তচ্যূত হচ্ছে লাখো মানুষ। তবে সরকারিভাবে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠা দশটি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত।

Reneta June

এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা নদীর উত্তাল ভাব এখন আর নেই। কালের বিবর্তনে বিবর্ণ হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম প্রধান নদী। সেখানে কোথাও কোথাও নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। অতিবৃষ্টি, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নেতাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ময়মনসিংহ এর ধোবাউড়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন এর বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পটুয়াখালির বাউফল উপজেলার কাছিপাড়া ইউনিয়নের কারখানা নদীর ভাঙ্গন রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার এক মাস যেতে না যেতেই তা নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে কংক্রিটের ব্লক ফেলে স্থানটিকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ফেনীতে মুহুরী নদীর ভাঙ্গন নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বর্ষায় বৃষ্টি পাহাড়ের এলাকার উজানের পানিতে মুহুরী নদীর প্রবাহ বেড়ে গিয়ে প্লাবিত করে। পানির অভাবে নদী যেমন মরে, ভাঙ্গে। তেমনি বর্ষায় প্লাবিত হয়ে আবার জনজীবন বিপর্যস্ত করে। ঢাকার বুড়িগঙ্গা, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা পানি দূষিত। একে যেকোনভাবে দূষণমুক্ত করতে হবে। কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ পানিকে দূষণ করে। দুর্গন্ধ থেকে মাছ মরে পরিবেশ নষ্ট হয়। এখন এই নদীর চারপাশগুলোতে বিভিন্ন খাবারের রেষ্টুরেন্ট করা হয়েছে।

আগে নদী বাঁচাই। জীবন বাঁচাই, পরিবেশ বাঁচাই। দেশকে তাঁর আসল ঠিকানায় পৌঁছাই। নদীমাতৃক বাংলাদেশ, মাছে ভাতে বাঙ্গালি। এই নদীভাঙন এবং বন্যার সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করতে হবে। নদীর পাড়গুলোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ও ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হবে। নদীতে ঘর নির্মাণে কলকারখানার বর্জ্য বালু দিয়ে ভরাট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি, বালু উত্তোলন, নদীর গতি পরিবর্তন করে নালা হয়ে যাচ্ছে। সুন্দরবনের জলজ উদ্ভিদ কমে যাচ্ছে। সুন্দরবনের জলজ উদ্ভিদ কমে যাচ্ছে, নদীর খরস্রোতা বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে, প্রবাহ কমে যাচ্ছে। যখন কোন ভয়াবহ আগুনের সূত্রপাত দেখা যায়, তখন পানির প্রয়োজন পড়ে। আগুন নেভানোর জন্য পানির প্রয়োজন হয়, জানমাল নিঃশেষ হয়। তখন পানি পাওয়া যায় না। এজন্য নদী নালার বিকল্প নেই। ফায়ার সার্ভিসের কাজে যারা নিয়োজিত তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে। কেউ কেউ প্রাণও হারায় আগুনে বা হার্ট এ্যাটাকে।

বিজ্ঞাপন

তাই নদীমাতৃক বাংলাদেশ বেঁচে থাকুক, পরিষ্কার পানি, বিশুদ্ধ পরিবেশ ও বিশুদ্ধ মানুষ চাই। দেশ, মানুষ ও শিশু সকল বিষয়ে সচেতন থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মানবতা কে সাধুবাদ জানাতে হবে। ভৌগলিক সীমারেখাকে অতিক্রম যেমন করা যায় না তেমনি বাংলাদেশের সৃষ্টির ইতিহাসকেও ভোলা যায় না। বাংলাদেশে প্রায় ৭০০টি নদী রয়েছে। এই নদ-নদীগুলোর উপনদী ও শাখা নদী রয়েছে।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

বিজ্ঞাপন

Nil Joler Kabbo
Bellow Post-Green View