ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুর্বার গতিতে এগোচ্ছেন বাংলার নারীরা। নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি দেশকে এনে দিচ্ছেন সম্মান, গর্ব করার ইতিহাস। তেমনই এক সাফল্যের এক কদম দূরে দাঁড়িয়ে উজ্জীবিত বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। প্রথমবারের মতো সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চান সানজিদারা। সমাজের বঞ্চনা-গঞ্জনা সয়ে যারা তাদের এতদূর এনেছেন, তাদের জন্য আনতে চান শিরোপা।
নিজের ফেসবুক পেজে দীর্ঘ এক বার্তায় দলের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন সানজিদা আক্তার। সবুজ ঘাসে লাল বৃত্ত এঁকে দেয়ার প্রত্যয় জানিয়ে মিডফিল্ড তারকা শুনিয়েছেন আক্ষেপ, পাওয়া-না পাওয়ার কথাও। জীবনযুদ্ধে লড়ে অভ্যস্ত অদম্য এই মেয়েরা অনুজদের জন্য সহজ করে দিতে চান কঠিন পথগুলো।
সানজিদার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হল-
‘২য় বারের মতো সাফ উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশ। প্রথমবার ফাইনাল খেলেছি ২০১৬ সালে। সেবার ভারতের বিপক্ষে আমরা হেরে যাই। ৫ বার সাফের মঞ্চে এসে ১ বার রানার্সআপ, ৩ বার সেমিফাইনাল এবং ১ বার গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিয়েছি আমরা।
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এবার মাঠে দারুণ ছন্দে রয়েছি, ফাইনালে প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপাল। স্বাগতিক হিসেবে ফাইনাল খেলা কিংবা স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ফাইনাল খেলা সবসময় রোমাঞ্চকর। এছাড়াও এবারের ফাইনাল ম্যাচটি কিছুটা ভিন্ন। বহুদিন পর সাফ পাবে নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন দেশ। আর তাই এবার রোমাঞ্চকর একটি ফাইনাল ম্যাচ হতে যাচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের হাত ধরে ২০০৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছিলো বাংলাদেশ। এখনো আমরা সেই গল্প শুনি। বাংলাদেশ ফুটবলের বড় সাফল্যের মহাকাব্যে সেটি উজ্জ্বলতম অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এবার আমাদের জেতার সময় এসেছে। আমাদের দলের প্রতিটি সদস্য এটি জিততে মুখিয়ে আছে।
যারা আমাদের এই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে আছেন, সেই সকল স্বপ্নসারথিদের জন্য এটি আমরা জিততে চাই। নিরঙ্কুশ সমর্থনের প্রতিদান আমরা দিতে চাই। ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনীকে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরো নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছু হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই।
পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়িদের ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়বো এমন নয়, এগারোজনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে, যে দলের অনেকে এই পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে।
আমরা জীবনযুদ্ধেই লড়ে অভ্যস্ত। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যাবো। জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে। তবে বিশ্বাস রাখুন, আমরা আমাদের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখবো না ইনশাআল্লাহ। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।’
উল্লেখ্য, নেপালের দশরথ রঙ্গশালা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে সোমবার বিকাল ৫.১৫ মিনিটে স্বাগতিকদের বিপক্ষে শিরোপার মঞ্চে লড়বে লাল-সবুজের দল।