চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

আকবরকে হারিয়ে শোকে কাতর স্ত্রী, বাকরুদ্ধ মেয়ে অথৈ

মাত্র ৫৩ বছর বয়সে নিভে গেল ‘ইত্যাদি’র মঞ্চ থেকে উঠে আসা শিল্পী আকবরের জীবন প্রদীপ! তবে আচমকা নয়, বরং শেষ সাতটি বছর অসুস্থতায় ভুগতে হয়েছে তাকে।

কখনো ভালো, কখনো মন্দ। হাসপাতাল থেকে বাসায় ছোটছুটিতে ছিলেন। চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে আকবরের পরিবার হিমশিম খাচ্ছিল।

এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে চিকিৎসার খরচ পেয়েছিলেন আকবর। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও চিকিৎসা করিয়েছেন আকবর। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। রবিবার দুপুর ৩টায় রাজধানীর পিজি হাসতালের আইইউসিতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আকবরের মেয়ে অথৈ

মৃত্যুর আগে কিডনি, পায়ে পচনসহ একাধিক রোগে ভুগছিলেন আকবর। তার ইচ্ছে অনুযায়ী যশোরের সুজলপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন হবে সোমবার।

রবিবার দুপুরে আকবরের মৃত্যুর খবর শুনে পিজি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আকবরের স্ত্রী কানিজ ফাতিমা ও মেয়ে অথৈ এর আহাজারি। হাউমাউ করে কাঁদছিলেন তারা। বারবার বলছিলেন, বেঁচে থাকার শেষ সম্বলটুকু তারা হারালেন। এখন কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

বুধবার বারডেম হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন আকবর। সেদিনই শেষবার আকবর তার স্ত্রী ও কন্যার সঙ্গে কথা বলেন। কানিজ ফাতিমা জানান, সেদিনের পরে আকবর আর কথা বলতে পারেননি। তার আগে সুস্থ হয়ে ফিরতে চেয়েছিলেন। তাহলে সে আজ আমাদের ছেড়ে কেন চলে গেল?

রবিবার সকালে পিজি হাসপাতালের ভিসির সঙ্গে আলাপ করে দুপুরে বারডেম থেকে এই হাসপাতালে আকবরকে এনেছিলেন তার স্ত্রী কানিজ। কিন্তু চিকিৎসা শুরুর আগেই মারা যান। কান্নায় ভেঙে পড়ে কানিজ বলেন, বুধবার রাতে মেয়ে ও আমার মাথায় শেষবার চুমু দিয়েছিল। তার চিকিৎসার জন্য অনেক কষ্টে টাকা ম্যানেজ করেছি যেন চিকিৎসার কোনো ত্রুটি না হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষটাকে ধরে রাখতাম পারলাম না। এখন আমাদের কী হবে?

অসুস্থ থাকাকালীন যখন জ্ঞান ছিল, তখন একমাত্র মেয়ে অথৈয়ের জন্য বেশী চিন্তা করতেন আকবর। তার স্ত্রী কানিজ বলেন, আকবর যদি কারও কাছে কখনো অন্যায় করে থাকে সবাই যেন তাকে ক্ষমা করে দেয়। বলেই কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতালের ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন আকবরের স্ত্রী!

পাশেই ছিল আকবরের একমাত্র কন্যা অথৈ। কাঁদতে কাঁদতে সে বলে, আব্বু আমার কপালে চুমু দিয়ে বলেছিল এটাই শেষ চুমু। আমি হয়তো আর ফিরবো না। তোর আর তোর মাকে বানের জলে ভাসিয়ে দিয়ে গেলাম। তোরা যেকোনভাবে ভালো থাকিস। তুই মানুষের মতো মানুষ হয়ে থাকিস। সবাই আমার আব্বুর জন্য দোয়া করবেন। সারাজীবন দেশের মানুষ যেন আমার আব্বুকে ভালোবাসে।

এর আগে অসুস্থ থাকাকালীন পিজি হাসপাতালে বেডে শুয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আকবর তার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছিলেন। কেঁদে কেঁদে ‘তোমার হাত পাখার বাতাসে’ গানের এই শিল্পী বলেছিলেন, ভয় হচ্ছে আমি মারা গেলে মেয়েটার কী হবে? এই মা ছাড়া আমার রক্তের আর কেউ। আমি চলে গেলে আমার মাকে কে দেখবে! আমার মা লেখাপড়ায় ভালো। নিজ যোগ্যতায় আমার মা ভালো স্কুলে পড়তে পারবে।

মেয়ে অথৈকে জড়িয়ে আকবর বলেছিলেন, আমার মা একেবারে অবুঝ শিশুর মতো। এই মায়ের জন্য হলেও আমি বাঁচতে চাই। দেশের মানুষদেরও বলছি, আমি যদি না থাকি আমার এই মাকে আপনারা দেখবেন।

যশোর শহরের অলিগলিতে রিকশা চালাতেন আকবর। খুলনার পাইকগাছায় জন্ম হলেও আকবরের বেড়ে ওঠা যশোরে। টুকটাক গান করতেন আর রিকশা চালাতে। তবে গান নিয়ে ছোটবেলা থেকে হাতেখড়ি ছিল না। আকবরের ভরাট কণ্ঠের গানের কদর ছিল যশোর শহরে। সে কারণে স্টেজ শো হলে ডাক পেতেন।

২০০৩ সালে যশোর এম এম কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন আকবর। সেবার বাগেরহাটের এক ভদ্রলোক আকবরের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তারপর তিনি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে চিঠি লেখেন আকবরকে নিয়ে। এরপর ইত্যাদির টিম আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই বছরই ইত্যাদিতে ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে, ফিরবে না সেতো আর কারও আকাশে’- কিশোর কুমারের এ গানটি গেয়ে রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যান।

এরপর আকবরকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি গায়ক পরিচয়ে পরিচিতি পান। পরে আকবরের ‘তোমার হাত পাখার বাতাসে’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।