মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত রোজা পালন করতে হয় নির্ধারিত নিয়মে। রোজার পরিচয়ের ক্ষেত্রে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার কথা বলা হলেও রোজার বিধিনিষেধ আরও ব্যাপক। রোজার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় এমন আছে, যার সাথে রোজাদারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেই রোজা ভঙ্গ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
এমন কিছু ঘটলে কখনও রোজার কাযা দিতে হয়, আবার কখনও দিতে হয় কাযাসহ কাফফারা। কাযা বলতে একটি রোজার পরিবর্তে কেবল একটি রোজাই রাখতে হয়।
আর কাফফারা বলতে, ভঙ্গ হওয়া প্রতি রোজার পরিবর্তে লাগাতার ৬০টি রোজা রাখা। তা সম্ভব না হলে ৬০ জন মিসকিন ব্যক্তির একবেলা আহারের ব্যবস্থা কিংবা একজন মিসকিনের ৬০ বেলা আহারের ব্যবস্থা করে দেয়া। এক বেলা আহারের পরিমাণ ন্যূনতম এক সদকাতুল ফিতরের পরিমাণে হতে হবে। এই হলো রোজা ভঙ্গ হবার কাযা এবং কাফফারা।
আবার কিছু বিষয় এমনও আছে, যা রোজাদারের পক্ষ থেকে সংঘটিত হলে রোজা ভঙ্গ যদিও হবে না; তবে পালিত সেই রোজাটি নিরেট খাঁটি বা বিশুদ্ধ বলার সুযোগও থাকে না। রোজার সাওয়াবের ক্ষেত্রে অপূর্ণতা চলে আসে। শরীয়তের বিধানমতে, এমন রোজাকেই মাকরুহ রোজা হিসেবে অভিহিত করা হয়।
কখন কোন কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং কখন কোন কারণে রোজা মাকরুহ হয়, সেই প্রসঙ্গে প্রয়োজনীয় জ্ঞান থাকা প্রত্যেক রোজাদারের জন্যে জরুরি। সংক্ষেপে রোজা ভঙ্গের কারণ ও মাকরুহসমূহের বিবরণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয়:
১. রোজার কথা স্মরণ থাকাবস্থায় শরীরের বাহ্যিক প্রবেশপথসমূহের মাধ্যমে শরীরের ভেতরে কোনো কিছু প্রবেশ করা। যথা: নাক, মুখ ও লজ্জাস্থান দিয়ে কোনো কিছু প্রবেশ করা।
২. ইচ্ছাকৃতভাবে বমি গিলে ফেলা।
৩. মহিলাদের মাসিক তথা হায়েয ও নেফাস শুরু হওয়া।
৪. স্ত্রীর সাথে সহবাস করা। এতে কাজা ও কাফফারা দু’টাই আবশ্যক।
৫. ভিন্ন কোন অস্বাভাবিক উপায়ে বীর্যপাত করলে রোজা ভঙ্গ হবে। এতে কাযা আদায় করা আবশ্যক।
৬. হুক্কা, তামাক ও ধূমপান করা।
৭. রোজার কথা স্মরণ থাকাবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভর্তি বমি করা।
যেসব কারণে রোযা মাকরুহ হয়:
১. গীবত করা, মিথ্যা বলা ও অশ্লীল আলাপচারিতা করা।
২. অনলাইনে বা অফলাইনে কারো সতর তথা গোপনাঙ্গ কিংবা অশ্লীল দৃশ্যে দৃষ্টি দেয়া।
৩. রোজাবস্থায় শরীয়তে নিষিদ্ধ আছে এমন গান শ্রবণ করা।
৪. মুখে থুথু জমাট করে তা গিলে ফেলা।
৫. রোজায় শরীর দুর্বল থাকাবস্থায় হিজামা করানো ও রক্ত দেয়া।
৬. টুথপেস্ট বা মাজন দ্বারা দাঁতব্রাশ করা। যদি টুথপেস্ট বা মাজনের স্বাদ খাদ্যনালী পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তবে রোজা ভেঙে যাবে।
৭. শুধুমাত্র দুর্বল না হওয়ার নিমিত্তে অপ্রয়োজনে শরীরে শক্তিবর্ধক ইঞ্জেকশন পুশ করা।
৮. বীর্যপাত ব্যতীত হস্তমৈথুন করা ইত্যাদি।