চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে যায় ১ শতাংশের কম শিক্ষার্থী

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস

সাজিদ হোসেন, (বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি): রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার অতি নগণ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রতিদিন গ্রন্থাগারে পড়াশোনা করেন গড়ে মাত্র ১০০ জন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ।

শিক্ষার্থীদের জ্ঞান চর্চার লক্ষ্যে ক্যাম্পাসের প্রাণকেন্দ্রে ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। দেশি-বিদেশি বই, শিক্ষকদের গবেষণাপত্র, জার্নাল, সংবাদপত্র ও সাময়িকীসহ প্রায় আড়াই লাখেরও বেশি সংগ্রহের সমাহার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই গ্রন্থাগার। তবে এই বিপুল সংখ্যক জ্ঞানভাণ্ডারে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত হতাশাজনক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক দশকে লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার উদ্বেগজনক। শিক্ষার্থীদের আধুনিক চিন্তাভাবনার ফলে লাইব্রেরি বিমুখ হয়ে পড়ছেন তারা। এতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল চিন্তাভাবনা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকেরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, লাইব্রেরিতে তাদের প্রয়োজনীয় বই পাওয়া যায় না। বই খোঁজা ও ইস্যু করতে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। ডিজিটাল কোনো সুবিধা লাইব্রেরিতে নেই। সেই সাথে গ্রন্থাগারের নিচের সাধারণ পাঠকক্ষে রয়েছে আসন সঙ্কট। ভোর থেকেই সিট ধরার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাদের। সিট না পেয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকেই ফিরে যেতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসে লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ছিল খুবই নগণ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর তুলনায় জানুয়ারি মাসে লাইব্রেরিতে উপস্থিতির হার ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ। অন্যান্য মাসেরও একই চিত্র।

গ্রন্থাগারে প্রয়োজনীয় বই খোঁজার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে মাত্র একটি কম্পিউটার। ফলে বাধ্য হয়ে বুক শেলফ থেকেই প্রয়োজনীয় বই খুঁজতে হয় শিক্ষার্থীদের। আর সেই বই নিজের কাছে সংগ্রহ করার প্রয়োজন হলে সেই মান্ধাতা আমলের সনাতন পদ্ধতিতেই ইস্যু করতে হয়। ডিজিটাল সুবিধা না থাকার পাশাপাশি নেই কোনো ই-লাইব্রেরি। গ্রন্থাগারের অনেক দুষ্প্রাপ্য বইয়ের নেই কোনো পিডিএফ সংস্করণ। ফলে শিক্ষার্থীরা চাইলেও বইগুলো পড়তে পারছেন না।

এ ছাড়াও গ্রন্থাগারের কিছু কিছু কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও সাধারণ পাঠকক্ষগুলোতে চলে বড় বড় বৈদ্যুতিক ফ্যান। ফ্যানের শব্দে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পাঠে মনোনিবেশ করতে পারেন না। এদিকে গ্রন্থাগারের রিডিংরুমেও রয়েছে আসন সঙ্কট।

গ্রন্থাগার নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। লক্ষাধিক বইয়ের সমাহার হলেও পাওয়া যায় না অনেক প্রয়োজনীয় বই। ফলে পড়তে আসতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুব বলেন, অনেক পুরোনো বই থাকলেও সেগুলোর নতুন সংস্করণ নেই। বইগুলো পড়ার জন্য অনুপযোগী হয়ে পরেছে। বিষয় ভিত্তিক সিলেবাসের সঙ্গে পুরোনো বইয়ের মিল পাওয়া যায় না। তাছাড়া অ্যাসাইনমেন্ট অর্থাৎ বিভাগের পড়াশোনা সংশ্লিষ্ট বই পাওয়া যায় না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীদের এখন মূল লক্ষ্যই হচ্ছে চাকরি করা। কেউ আলোকিত মানুষ হতে চায় না। বর্তমানে চাকরির পাওয়া সোনার হরিণ পাওয়ার মতো। অনেক কম্পিটিশন পেরোতে হয়। কিন্তু অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার সাথে চাকরির পড়া সম্পূর্ণ ভিন্ন। যার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেষ করার আগেই চাকরির প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। ফলে তারা গ্রন্থাগার বিমুখ হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সাবেক প্রশাসক ও রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী বলেন, বর্তমান শিক্ষার্থীরা ক্যারিয়ার নিয়ে বেশি চিন্তা ভাবনা করছে। তারা চাকরির পড়াশোনা নিয়ে বেশি আগ্রহী। এজন্য মূলত তারা লাইব্রেরিতে আসতে চাচ্ছে না।

সার্বিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রশাসক অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই লাইব্রেরিতে নতুন নতুন বই সংযোজনের চেষ্টা করছি। তবে দীর্ঘদিন গ্রন্থাগারে নতুন বই সংযোজন হয়নি। ২০১৭ সালে গত ১০ বছরে মাত্র পাঁচ লাখ টাকার বই কেনা হয়েছিল। পরে আমি ১৩ লাখ টাকার বাজেট পেয়েছি। সেই টাকা দিয়ে আমরা ৮০ শতাংশ বই কিনেছি। পরের বছর ৪৩ লাখ টাকার একটা বড় বাজেট পেয়েছি। সেই টাকা দিয়ে কিছু বই কিনেছি। বাকিটা প্রক্রিয়াধীন। আর ৩০ লাখ টাকার একটা টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। তবে যা বাজেট পাচ্ছি আমরা সেটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।

লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থী না আসার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা আমাদের সময়ে ছোটবেলা থেকেই লাইব্রেরিতে যেতাম। লাইব্রেরিতেই পড়াশোনা করতাম। কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েরা ছোটবেলায় কি কখনো লাইব্রেরি দেখেছে? গিয়েছে কখনো? যায়নি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তাদেরকে লাইব্রেরিমুখী করা কঠিন। তবে কিছুদিন আগের তুলনায় বর্তমানে লাইব্রেরিতে উপস্থিতির হার কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে।