চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু নিয়ে যা বলছে সদর দপ্তর

নওগাঁয় র‍্যাব হেফাজতে আটক নারীর অসুস্থ হওয়া ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব সদর দপ্তর।

সংস্থাটির ঊর্ধ্বতনরা বলছে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মঙ্গলবার ২৮ মার্চ র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু ও র‍্যাব সদস্যদের কারো দায়িত্বে অবহেলা ছিল কিনা জানতে চাইলে সংস্থাটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন: রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে, ফেক আইডি ব্যবহারে তার নামে চাকরি দেয়া ও বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রতারণা করে আসছিল। তিনি ২০২২ সালের মার্চে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। সেখানে তিনি এব্যাপারে অভিযোগ করেন। একজন নারী তার নামে ফেইসবুক আইডি ব্যবহার করে প্রতারণার অভিযোগে আদালতে মামলাও করেন।

‘গত ১৯ ও ২০ মার্চ নিজ কার্যালয়ের সামনেই তার নাম ব্যবহার করে প্রতারক চক্র অর্থ প্রতারণা করে। এই খবর পেয়ে খোঁজ নেন যে প্রতারণায় আল আমিন নামে একজনের যোগসাজশ রয়েছে। এরপর তিনি খবর পান জেসমিন নামে এক নারীর নাম। তিনি অফিস যাবার পথে র‍্যাবের টহল টিমকে অভিযোগ করেন। তার সামনেই অভিযুক্ত নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করি। জিজ্ঞাসাবাদকালে নারী সদস্যরা ছিলেন। সাক্ষী ছিলেন, অভিযোগকারী এনামুল হকও ছিলেন।’

সংস্থাটির মুখপাত্র আরও বলেন, সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদকালে আটক জেসমিন অপকটে সব অভিযোগ স্বীকার করেন। তার মোবাইলে চলমান অবস্থায় এনামুল হকের নামে খোলা ফেক ফেইসবুক আইডি দেখা যায়। তার মোবাইলে সোনালী ব্যাংকের একাউন্টের তথ্য পাই। যেখানে লাখ লাখ টাকা জমা রশিদের তথ্য পাই।

‘পরে সাক্ষীদের সামনে তাকে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আটক করা হয় ওই নারীকে। এরপর জব্দ আলামত নিয়ে একটি কম্পিউটারের দোকানে প্রিন্ট করা হয়। এরপর সেখান থেকে থানায় মামলার উদ্দেশে যাবার পথে ওই নারী অসুস্থবোধ করেন। তখন র‍্যাব মামলার চেয়ে তাকে হাসপাতালে নেয়াকেই অধিক গুরুত্ব দেয়।’

নিহত সুলতানার পরিবার বলছে, র‍্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কমান্ডার মঈন বলেন: যেহেতু আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে তাই র‍্যাব সদর দপ্তরের পক্ষ আমাদের ইনকুয়ারি সেল রয়েছে। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্তে দেখা হচ্ছে কারো কোনো ধরণের অবহেলা, গাফিলতি বা যোগসাজশ কিংবা অনৈতিক কিছু ছিল কিনা। তদন্তে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে চাকরিচ্যুতিসহ কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন: র‍্যাব শুধু না, প্রত্যেকটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নারী ও শিশু অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সিরিয়াস। আমরা ওই নারীকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাই। তিনি গাড়ি থেকে নিজে নেমে হেঁটে হাসপাতালে ঢোকেন। তার আত্মীয়-স্বজন ও তার এসিল্যান্ডসহ ভূমি অফিসের তার সহকর্মীদরে খবর দেয়া হয়।

তবে শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফ এম শামীম আহাম্মদ গণমাধ্যমে জানান: তারা যতটুকু জানতে পেরেছেন, র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই নারী পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। তারপর তাকে নওগাঁ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সিটি স্ক্যান করে তারা জানতে পেরেছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। তার মাথায় ছোট্ট একটি লাল দাগ ছিল। শরীরে অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

তবে কমান্ডার আল মঈনের ভাষ্য, সন্ধ্যার দিকে নওগাঁ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্ট্রোক সন্দেহে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে সিটি স্ক্যানে স্ট্রোকের আলামত আসে। তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

কমান্ডার মঈন বলেন: ওই নারী কী কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন, তা কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছেন, ডেথ সার্টিফিকেটে তা উঠে এসেছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা মাথায় দাগ এমন কিছু ডেথ সার্টিফিকেটে ছিল না।

র‍্যাবের কারো অবহেলা বা গাফিলতি র‍্যাব পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন: এটা এখনি বলার মতো সময় আসেনি। মেডিক্যাল রিপোর্টে সব ক্লিয়ার। তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি তদন্তে যদি কারো কোনো ধরণের গাফিলাতি পায় তাহলে অবশ্যই আমরা আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

মামলা দায়েরের বিষয়ে আল মঈন বলেন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে পারমিশন লাগে। ভুক্তভোগী যুগ্ম সচিব এনামুল হক অনুমতি সাপেক্ষে পরে থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

শুক্রবার ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।এরআগে বুধবার ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে আটকের পর র‍্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামের এক নারীর মৃত্যুর হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।

সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন।