ইরান কি এমন দল ছিল? নাকি ইংল্যান্ড বেশি ভালোটাই দেখিয়ে দিলো একদম প্রথম ম্যাচেই। সত্যিই শক্তিশালী ইরানকে ধসিয়ে দিলো এই বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট, ইংল্যান্ড। একটুও ছাড় নেই যে ম্যাচে। একটুও শ্বাস নেয়ার জায়গা ছিল না যেখানে। বারবার ইরানের মধ্যমাঠ, রক্ষণভাগ, সবকিছুই ভেঙে চুরমার করেছে ইংলিশরা, হেসে খেলে।
ইরান আসলে চাপ দেবে, না নেবে, নিলেও কীভাবে সামলাবে, তার কোনোটাই বুঝে উঠতে পারেনি। তাদের কাছে কোনো কৌশল রাখতে দেয়নি ইংল্যান্ড। ব্যবধান ৬-২। এটি ইরানের মনোবল যথেষ্ট ভেঙেছে সন্দেহ নেই। ঐতিহাসিকভাবে এমনভাবে পরাভূত হওয়ার ইতিহাস খুব কম রয়েছে ইরানের।
ইরান মাঠে কোনো জায়গা পায়নি। জায়গার তালাশ করেছে। ঠিকানা মেলেনি। হদিস মেলেনি, অঙ্ক মেলেনি, আর মাথা কাজ করেনি। তাই ওরকম একের পর এক গোল হজম করতে হয়েছে তাদের।
ইংল্যান্ডের হাতে সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল যেটি, তা হল অসংখ্য ভালো খেলোয়াড়, মাঠে এবং বেঞ্চে। প্রত্যেকটি খেলোয়াড় জানতো তাদের দায়িত্ব কী। তারা তাদের জায়গায় দায়িত্ব পালন করে গেছে মাথা উঁচু করে। অফসাইড ট্র্যাপগুলো ব্রেক করে ইরানকে বোকা বানিয়েছে তারা। অত্যন্ত আস্থার সাথে বুঝিয়ে দিয়েছে ইরানকে, তোমরা আন্ডারডগ। আমরা যতো পারি গোল এগিয়ে রাখবো। কারণ গোল ডিফারেন্সটাও আমাদের মাথায় আছে।
ইংলিশ কোচ সাউথগেটের নতুন পোশাক সবার নজর কেড়েছে। স্যুট-টাই পরা মানুষটি যেন একদম মাঠের মানুষ হয়ে গেছেন। পুরো বদলানো একটা লুক। দলের সঙ্গে একদম মিশে কাজ করেছেন। তাই এমন ফলাফল, তা-ও বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে। প্রাধান্য বিস্তার কাকে বলে, কতো প্রকার ও কী কী, সবই বুঝিয়ে দিলো ইংল্যান্ড।
ইরানের মরিয়া চেহারাটা বড্ড অচেনা মনে হচ্ছিলো প্রতিটি মুহূর্তে। কিন্তু ফুটবলে টাইব্রেকার ছাড়া কোনো নিয়তি নেই। এখানে খেলতে হবে পুরোটা সময়। খেলা আর মাথার খেলা দিয়েই জিততে হবে। সেই শক্তিমত্তায় ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দিনটি স্মরণীয় করে রাখল।
সাকা অসাধারণ একজন তরুণ, মেধাবী এবং অধ্যবসায়ী খেলোয়াড়। সব সফট টাচের কাজ। আর ইরানের শিবিরে হেভি টাচের একাকার। ইংল্যান্ডের ডিফেন্ডার শ’কে যতোই দেখি ততোই মুগ্ধ হই, কারণ তার আস্থা আর বল দেয়ার সাকসেস রেট ঈর্ষণীয়। একেই হয়তো বলে আদর্শ রক্ষণভাগ।
ম্যাচে র্যাশফোর্ড যখন এলেন, তখন আরও একধাপ বদলে গেল খেলার চিত্র। ক্ষিপ্রতা আর বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ যেন তখন অন্যমাত্রার। মনেই হয়নি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই তারকাকে দেখে যে একজন বদলি খেলোয়াড় নেমেছেন। এর মানেটা হচ্ছে সাউথগেট তার দলের সবাইকে বোঝাতে পেরেছেন কার কাজ কী, আর কাকে কখন প্রয়োজন।
যেমন জ্যাক গ্রিলিশের এন্ট্রিও ঠিক তাই। বিভিন্ন ফরমেশন ব্যবহার করেছেন তিনি। কখনো মিডফিল্ড ভারি করেছেন। কখনো তার খেলোয়াড়দের দিয়ে স্পেস ভরেছেন মাঠের, আর কখনো ডিফেন্ডারদের দারুণ সব ওভারল্যাপ করিয়েছেন। আর ওয়ান-টু আর ভলি এবং হেড তো ছিলই। সেন্ট্রাল অ্যাটাক ছিল সত্যিই সিংহের মতোই, বিধ্বংসী।
এছাড়া আর কী-ই-বা বলা যায়। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের এরপরের খেলা ইউএসএ’র সাথে আর ইরানের গ্যারেথ বেলের ওয়েলস-এর সাথে। একটি বিষয় বলে রাখা ভালো: হ্যারি কেন কোনো গোল না পেলেও তিনি যে পুরো দলটির মধ্যমণি তা আবারো প্রমাণ করলেন। তার গোড়ালির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সে জায়গায় ইনজুরি যেন কোনোভাবেই না হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। কোচ এবং সাপোর্ট স্টাফরাও নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। দারুণ শুরু ইংল্যান্ড। ঘুরে দাঁড়াতে হবে মুষড়ে পড়া ইরানকে।