আক্ষেপ, চাওয়া, স্বপ্ন কিংবা শূন্যতা- সব ছাপিয়ে যাবেন লিওনেল মেসি? ম্যাজিক্যাল পারফরম্যান্সে ৩৬ বছরের শিরোপাখরা ঘোচানোর মিশনে দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ৬ ম্যাচে ৫ গোল ও ৩ অ্যাসিস্টে ফ্রান্স তারকা কাইলিয়ান এমবাপের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন গোল্ডেন বুটের। গোল্ডেন বল জেতার দৌড়েও আছেন শক্ত অবস্থানে। লুসেইলে ট্রফিতে তো চোখ থাকবেই। সবকিছু জেতার সামনে জাদুকর মেসি।
৩৫ বছর বয়সী আর্জেন্টিনা স্বপ্নদ্রষ্টায় নাওয়ে ভেসে স্বপ্ন বুনছে আলবিসেলেস্তে দল। লুসেইল স্টেডিয়ামে ফ্রান্সকে হারিয়ে দিতে পারলে সোনালী ট্রফির সঙ্গে ব্যক্তিগত সেরার পুরস্কারও উঁচিয়ে ধরার সুযোগ বাড়বে এমএল টেনের। ধরণীতে নেমে আসবে মধুমাখা মুহূর্তের।
কাতারের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে মেসি যদি গোল পেয়ে যান এবং অন্যদিকে এমবাপে না পান, তাহলে মেসির কাছেই যাবে গোল্ডেন বুট। হিসেব-নিকেশে থাকবে মাঠের সময়ও। পুরস্কারের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী এমবাপে ৪৭৭ মিনিট মাঠে থেকে পাঁচ গোল করেছেন, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও দুটি।
মেসি সেখানে সময়ের দিকে খানিকটা পিছিয়ে থাকলেও গোল করানোয় এগিয়ে আছেন। ৫৭০ মিনিট খেলা মেসির পাঁচ গোলের সঙ্গে আছে তিনটি অ্যাসিস্ট। যা কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখছে আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে।
আসরজুড়েই দাপুটে খেলেছেন মেসি। বল দখল, ট্যাকটিস, গোল করানো কিংবা মাঠের আধিপত্যে বয়স যেন একটুও প্রভাব রাখতে পারেনি। উল্টো ত্রিশ পেরোনো খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে পুরনো যে কথাটি আছে ‘ফুরিয়ে গেছেন’, সেটিকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে ছুটছেন মেসি। টুর্নামেন্টে একাধিক ম্যাচে একাই ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন।
স্বপ্নের শুরুটা যদিও নিজের মতো করে হয়নি মেসির। ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার ধাক্কাটা এসেছে এশিয়ার দেশ সৌদি আরবের কাছে। ২-১ গোলের হার যেখানে মেসিদের ভেঙে টুকরো করে দেয়ার কথা, সেখানে পুরনো রূপে ফিরে যায় লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা। নকআউট বনে যাওয়া পরের পাঁচটি ম্যাচেই খেলে দাপুটে। এরমাঝে ক্লিনশিট ছিল তিন ম্যাচে।
আতশ কাঁচের নিচে মেসির পারফরম্যান্স রাখলে অনেকখানি এগিয়ে আছেন মেসি। রেকর্ড ভেঙে নিজের নামে গড়ার মিশনে সর্বাধিক কিংবা সর্বোচ্চ তালিকার কয়েকটা স্থানে নিজেকে নিয়েছেন শীর্ষে। প্রথম ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোল করলেও সৌদির কাছে হেরে বসে দল।
মেসির শিরোপা স্বপ্নও যেন তখন থেকে নতুন শুরু করে। টিকে থাকার ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে করেন গুরুত্বপূর্ণ গোল, ২-০ গোলের অন্যটিতেও ছিল তার ছোঁয়া। পোল্যান্ডের বিপক্ষেও দাপুটে ছিলেন আরও, কিন্তু গোল পাননি। ‘সি’ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষে ষোলোতে আসে আর্জেন্টিনা। বড় হতে থাকে মেসিদের শিরোপার স্বপ্ন।
সত্যিকারের নকআউটে প্রথমে পায় অস্ট্রেলিয়ার দেখা, তারপর নেদারল্যান্ডস, এরপর ক্রোয়েশিয়া, এবার শিরোপার মঞ্চে ফ্রান্স।
শেষ ষোলোতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গোল করে ঘুচিয়ে দিয়েছেন নক আউটে গোল না পাওয়ার আক্ষেপ। পরে কোয়ার্টার ও সেমিতেও জাল খুঁজে পেয়েছে তার পা, ছিল একটি করে অ্যাসিস্টও। গোল্ডেন বল এবং বুট দুটো পুরস্কার জিততে যা লাগবে তার সবকিছুই করে রেখেছেন মেসি। আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন।
আর্জেন্টিনা এখন শিরোপার নিঃশ্বাস দূরত্বে। মেসির এই পুরস্কারগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য ফাইনালিস্ট এমবাপে-গ্রিজম্যানও আছেন সেরা সময়ে। সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে সোনার বুট এবং দুর্দান্ত পারফর্ম করে টুর্নামেন্টসেরা বল কার হাতে উঠতে চলেছে, ফাইনালের শেষ বাজি বাজার আগে হয়ত সেটার সমাধান হয়ে যাবে!