বেনজেমা নেই ইনজুরির কারণে। এলো প্ল্যান বি। অলিভিয়ের জিরুদ। গত বিশ্বকাপে যার একটি শট-ও টার্গেটে ছিল না, তিনিই কী না ঘুরিয়ে দিলেন ম্যাচের চাকা। অস্ট্রেলিয়ার দারুণ শুরুটা ভেস্তে গেল এমবাপে-গ্রিজম্যান-রাবিওত-ডেম্বেলের মহাদাপুটে পারফরম্যান্সে। সকারুজদের তরী লে ব্লুজদের সাগরে এসে ডুবলো ৪-১ গোলে।
ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে ফ্রান্স দলের টুইট। ড্রেসিং রুম প্রস্তুত, সবাই প্রস্তুত তো? অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া দলের টুইট, কা’মন অস্ট্রেলিয়া। মনে পড়ে ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে কাজানে ফ্রান্স-অস্ট্রেলিয়ার খেলাটি বেশ হাড্ডাহাড্ডি হয়েছিল?
কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার তারকা খেলোয়াড় গুডউইন বলেছিলেন, আমরা বিশ্বকে চমকে দিতে পারি ফ্রান্সকে হারিয়ে। গুডউইন কথা রেখেছেন। তিনি খেলা শুরুর নয় মিনিটের মাথায় একটি গোল করে চমকে দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার গোলটিই যে অস্ট্রেলিয়ার জন্য কাল হবে তা কে জানতো।
তাদের জন্য উল্টো চমকের পর চমক এলো। ফ্রান্স অল-আউট ফুটবল খেলা শুরু করে গোল খাওয়ার পরপরই। ধীরে ধীরে ভাঙতে শুরু করে সকারুজদের। ভাঙনের শুরু মিডফিল্ড আর উইং থেকে। গ্রিজম্যান, রাবিওত, এমবাপে আর ডেম্বেলে যেখানে মুখ্য ভূমিকা রাখেন। বাম দিকে এমবাপের আচমকা প্রচণ্ড গতির দৌড় আর ডানে ডেম্বেলে। উইং-এ একের পর এক পাসের বন্যায় ভাসিয়েছেন গ্রিজম্যান এবং রাবিওত।
রাবিওত সমতায় ফেরালেন দারুণ প্লেসমেন্ট হেডারে। একটু পরই রাবিওতের অ্যাসিস্ট। নিজে গোল না করে গোল করালেন লে ব্লুজদের বুড়ো মানুষটিকে দিয়ে। অলিভিয়ের জিরুদ। ফ্রান্সের হয়ে তার আন্তর্জাতিক ৫০তম গোল। ফ্রান্সের প্ল্যান বি ওয়ার্ক করা শুরু করলো।
প্রথমার্ধের ৩৫ মিনিটের ভেতরই পুরো অস্ট্রেলিয়া দল তাদের ডিফেন্সিভ থার্ডে নেমে মরিয়া হয়ে বল ক্লিয়ারে একরকম বাধ্যই হল। এরপর থেকে ম্যাচ শেষ হওয়া অবধি নিজেদের হাফেই হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে সকারুজদের। প্লেমেকিং-এ গ্রিজম্যান দেখিয়েছেন সৃজনশীলতার কোন শিখরে বাস করেন তিনি। তার আইকিউ আর ইনস্ট্যান্ট পাসিং এবিলিটি অনবদ্য। দ্বিতীয়ার্ধে অস্ট্রেলিয়ার একটি হেডার সাইডবারে লেগেছিল ঠিকই, কিন্তু তা তেমন ভীতিকর ছিল না বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের জন্য।
ফ্রান্স সেকেন্ড হাফে দুটি গোলই করলো হেড থেকে। প্রথমটি করলেন এমবাপে। তারপর জিরুদ, নিজের দ্বিতীয় গোলটি করলেন। চূড়ান্ত ফল সবশেষে দাঁড়াল ৪-১। অস্ট্রেলিয়া শুধু ভাবলো গুডউইনের ওই আর্লি গোলটা নিয়ে। একটু বেশি আগেই কি তারা গোলটা করে ফেলেছিল? যাই হোক, দিনশেষে গোলের খেলাই তো ফুটবল।
বলে রাখি, ফ্রান্স সেই দল মোটেই নয় যে গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে বলে এবারে প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়বে। যেমনটি গতবার ঘটেছিল জার্মানির ক্ষেত্রে। তার আগে স্পেনের বেলায়। বা এরকম আরও উদাহরণ রয়েছে অন্যান্য বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ব্যর্থতার। ফ্রান্স আবারও বিশ্বকাপ জিততে এসেছে তাদের স্পিড, সাডেন কাট-ব্যাক, ডিফেন্সিভ লাইন ব্রেক, দারুণ প্লেমেকিং, পিলার ডিফেন্স এবং সর্বোপরি অত্যন্ত প্রখর ফুটবলিং ব্রেইন নিয়ে।
দুর্বলতা বা ভয়ের জায়গা তাদের জন্য একটিই, আর সেটি হল তাদের গোলকিপিং। হুগো লরিসে ক্ষিপ্রতা কিছুটা কমেছে বলেই দৃশ্যত মনে হল। ফ্রান্স অনায়াসে ফরমেশন চেঞ্জ করতে প্রস্তুত করতে পারা একটি দল। আর অ্যাটাকিং-এ গেলে ৩-৫-২ তাদের জন্য এই মুহূর্তে ইচ্ছের ব্যাপার।
সবচেয়ে বড় কথা, ব্যালন ডি’অর জেতা বেনজেমা যে ম্যাচে নেই তার লেশমাত্র বোঝা গেল না ফ্রান্সের একটি খেলোয়াড়ের চোখমুখ দেখে। উল্টো প্ল্যান বি কাজে লাগালো নীল শিবিরের হেড কোচ দিদিয়ের দেশম। তিনি হাসলেন। ফ্রান্সের সবাইকে আনন্দে ভাসালেন। বিশ্বকাপ জিততে আসা অন্য দলগুলোকে জানান দিলেন, আমরা আসছি, তোমরা প্রস্তুত থেকো।