ভিনদেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের পর প্রথমবার বাংলাদেশের দর্শক দেখলেন মোহাম্মদ নূরুজ্জামান পরিচালিত শিশুতোষ ঘরানার ছবি ‘আম কাঁঠালের ছুটি’। রবিবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যার পর শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে এদিন হল ভর্তি দর্শক ছবিটি দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন।
বিশেষ প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি, বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
এছাড়া ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’র নির্মাতা মসিহউদ্দিন শাকের, মুহাম্মদ কাইউম, মইনুদ্দিন খালেদ, হৃদি হক সহ সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে জড়িত বহু পরিচিতজন উপস্থিত ছিলেন। সিনেমা প্রদর্শনীর আগে নির্মাতা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান ‘আম কাঁঠালের ছুটি’ নির্মাণ নিয়ে তার প্রাক প্রস্তুতির কথা বলেন। স্থপতি হয়েও কীভাবে তিনি সিনেমা নির্মাণে ঝুঁকলেন তা নিয়ে বলার পাশাপাশি ছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে যে দারুণ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন, সেই গল্পও দর্শকদের শোনালেন।
জানালেন, নিজের শৈশব কেমন ছিলো, তা নিজের মেয়েকে দেখাতেই তিনি ‘আম কাঁঠালের ছুটি’ নির্মাণে হাত দেন।
প্রদর্শনীর আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এম খালিদ বলেন, ‘আমরা যে শৈশব কাটিয়েছি, তা এখনকার প্রজন্মের কাছে দূরাশা। ইন্টারনেট আর প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় তারা এখন সব সময় ফেসবুকে চোখমুখ গুঁজে রাখে। বাইরের দুনিয়ার সাথে তাদের কোনো এটাচমেন্ট নেই। এটাকে আমি উন্নতপৃথিবীর অভিশাপই বলবো। সেই জায়গায় ‘আম কাঁঠালের ছুটি’র মতো সিনেমা নির্মাণ আমাদের জন্য আশা জাগানিয়া।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শিশুদের ক্রমবিকাশ, বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত করতেই এমন আরও সিনেমার প্রয়োজন।’
উদ্বোধক ও মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি প্রতিমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে খুব বেশী শিশুতোষ ছবি নির্মাণ হয়নি। আমরা আশা করবো, এ ধরনের ছবি নির্মাণের প্রতি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্টজনরা বিশেষ ভূমিকা রাখবেন।
রাত প্রায় পৌনে ৯টায় শুরু হয় সিনেমার প্রদর্শনী। দর্শক মন্ত্রমুগ্ধের মতো সিনেমাটি উপভোগ করেন। প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টার সিনেমাটি শেষে তুমুল কড়তালিতে মুখর হয় চিত্রশালার মিলনায়তন। সিনেমাটি নিয়ে দর্শক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। অনেককে দেখা যায়, সিনেমা শেষে নির্মাতাকে জড়িয়ে ধরে নিজের ভালো লাগার কথা জানাতে। ‘আম কাঁঠালের ছুটি’র কলাকুশলীদের নিয়ে দল বেঁধে ছবি তোলায় ব্যস্ত হন অনেকে।
উপস্থিত দর্শকের বেশীর ভাগই যেন নিজের শৈশবকে দেখতে পেলেন ‘আম কাঁঠালের ছুটি’-তে। তাই সিনেমা শেষ হওয়ার পরও মিলনায়তনের বাইরে এসে সিনেমাটি নিয়ে আলোচনায় মেতে থাকতে দেখা যায়! শৈশবের বহু স্মৃতি যেন উস্কে দিয়েছে সিনেমাটি! সবার স্মৃতিকাতরতার ঘোর আঁচ পাওয়া যাচ্ছে! এদিকে ঘড়ির কাঁটা ১১টা ছুঁইছুঁই, চিত্রশালা মিলনায়তনের বাতি নেভানো হচ্ছে! এক প্রকার বাধ্য হয়েই যেন ঘরের দিকে পা বাড়াতে হলো!
সবার উচ্ছ্বাস দেখে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নির্মাতা জানালেন, ‘দর্শকদের সিনেমাটি পছন্দ হয়েছে, এরচেয়ে ভালো লাগার আর কিছু নেই।’ শরীফ উদ্দিন সবুজের ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘আম-কাঁঠালের ছুটি’ সিনেমাটি দেশের দর্শকদের জন্য আগামী ১৮ আগস্ট মুক্তি পেতে যাচ্ছে।
সত্তর-আশি কিংবা মধ্য নব্বইয়ের দশকে যারা শৈশব-কৈশোর পার করেছেন তারা নিজেদের খুঁজে পাবেন এ সিনেমায়। সেইসঙ্গে হারিয়ে যাওয়া কিংবা হারাতে বসা প্রাকৃতিক পরিবেশ আর আমাদের নিজস্ব লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হবে নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোররা।
‘আম কাঁঠালের ছুটি’ সিনেমায় চরিত্রগুলোতে যারা অভিনয় করেছেন, তারা কেউ পেশাদার অভিনয়শিল্পী নন। প্রত্যেকেই এই সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবার অভিনয়ে হাতেখড়ি। প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন- লিয়ন, জুবায়ের, আরিফ, হালিমা ও তানজিল। অন্যদের মধ্যে ছিলেন- ফাতেমা, কামরুজ্জামান কামরুল, আব্দুল হামিদ প্রমুখ।