মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা নর্দমার পানিতে পোলিও ভাইরাস শনাক্ত করেছেন।
নিউইয়র্ক নগরীর উত্তরের রকল্যান্ড কাউন্টিতে এক পোলিও রোগী শনাক্তের কয়েক সপ্তাহ পর নর্দমায় এই ভাইরাসের সন্ধান মিলল। অন্যদিকে লন্ডনের আটটি বড় এলাকায় নর্দমার পানিতে পোলিও ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে।
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দু’ দেশেরই সংশ্লিষ্টরা যারা টিকা নেননি তাদের টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
নিউইয়র্কের উত্তরের রকল্যান্ড কাউন্টি রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, “পোলিও ভাইরাস রোগীর প্যারালাইসিস এমনকী মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। তাই আমরা নিউইয়র্কবাসীদের টিকা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিশনার ড. মেরি বাসেট বলেছেন, “নর্দমার পানিতে পোলিও ভাইরাস পাওয়াটা বিস্ময়কর নয়, তবে উদ্বেগজনক। শিশু এবং বড়দের সবাইকে সুরক্ষিত রাখার উপায় হল কার্যকরভাবে ভ্যাকসিনেশন।”
গত ২১ জুলাইয়ে নিউইয়র্কের রকল্যান্ড কাউন্টিতে একজন পোলিও আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ পায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০ বছরের মধ্যে সেটিই ছিল প্রথম পোলিও রোগী।
লন্ডনের নর্দমার পানিতেই এই ভাইরাসের খোঁজ মিলেছে বলে জানিয়েছে ইউকে হেলথ সিকিউরিটি সার্ভিস (ইউকেএইচএসএ)। সেই সঙ্গে ৯ বছরের কম বয়সী শিশুদের টিকা দেয়ার উপর জোর দিয়েছে ইউকেএইচএসএ।
লন্ডন প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে যে শহরের বেশ কয়েকটি অংশে নর্দমার জলে পোলিও ভাইরাস জীবাণুর সন্ধান মিলেছে। এরপরেই ১ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুদের পোলিও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য বুস্টার ডোজের পরামর্শ দিয়েছে ইউকে হেলথ সিকিউরিটি সার্ভিস (ইউকেএইচএসএ)। তবে এখনও পর্যন্ত মৃত্যুর কোনও খবর পাওয়া যায়নি বলে আশ্বস্ত করেছে ইউকেএইচএসএ।
এক বিবৃতিতে ব্রিটেনের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি বলেছে, লন্ডনের আটটি বড় এলাকায় নর্দমার পানিতে পোলিও ভাইরাস সনাক্ত করা হয়েছে। ভাইরাসের নমুনাগুলির পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়। যদিও সংক্রামিতদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছে ইউকে হেলথ সিকিউরিটি সার্ভিস। সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, তারজন্যই পোলিও ভ্যাকসিনেশনের ওপর জোর দেয়ার কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এখনই টিকা দেওয়া শুরু হলে সংক্রমণ কমানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে ইউকেএইচএসএ। সেই সঙ্গে লন্ডন শহরের আরও ২৫টি নর্দমার পানির ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
ইউকে হেলথ সিকিউরিটি সার্ভিস আরও জানিয়েছে যে আমেরিকা এবং ইসরাইলে পোলিও জীবাণুর সন্ধান মিলেছে। তার সঙ্গে লন্ডনের পাওয়া জীবাণুর কোনও মিল আছে কিনা, তারও অনুসন্ধান চলছে বলে জানানো হয়। এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে ২০০ জন পোলিও আক্রান্তের মধ্যে মাত্র ১ জন প্যারালাইসিস লক্ষণ দেখা দেয়। অধিকাংশ আক্রান্তের কোনও উপসর্গ থাকে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে লন্ডনে ছড়িয়ে পড়া পোলিও ভাইরাসের সঙ্গে আমেরিকা ও ইসরাইলের ভাইরাসের মিল রয়েছে বলে দাবি করেছেন লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পোলিও বিশেষজ্ঞ ক্যাথলিন ও’রিলি।
লন্ডনে প্রাপ্ত ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করেছেন ওই বিশেষজ্ঞ।
পোলিও ভাইরাসের আক্রান্তের প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, বমি এবং পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া। এই রোগে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যু হতে পারে। এটি এমন একটি রোগ যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের পোলিও রোগের শিকার হতে দেখা যায়।