পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে সরকার ও জনগণের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বুধবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর পর্যটন ভবনে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডো ‘প্লাস্টিক পল্যুশন টুওয়ার্ডস প্লাস্টিক ট্রিটি নেগোসিয়েশন’ শীর্ষক একটি নীতি নির্ধারণী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসডোর চেয়ারপারসন ও সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, প্লাস্টিক দূষণ মানব সমাজ এবং পরিবেশ উভয়ের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা। প্লাস্টিক দূষণ কমানোর জন্য সরকার ও জনসাধারণের একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যা বৈশ্বিক প্লাস্টিক চুক্তির পথ সুগম করবে। আমাদের যত দ্রুত সম্ভব একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে কারণ এটি জলবায়ু পরিবর্তনে আরও বেশি অবদান রাখে।
আলোচনা অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় বলা হয়, বাংলাদেশ দুই দশক আগে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। তা সত্ত্বেও রান্নাঘর, পাবলিক স্পেস এবং বড় বড় সুপার শপে অপচনশীল প্লাস্টিক পণ্য পাওয়া যায়। ২০০২ সালের পলিথিন ব্যাগ এর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, পলিথিনের ব্যাগ এখনও বাংলাদেশে উৎপাদন, ক্রয় এবং ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এই আইন বাস্তবায়নে ধীর গতিতে কাজ করছে।
এসডোর ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সচেতনতা ও অ্যাডভোকেসির ফলশ্রুতিতে, বাংলাদেশ হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে উপকূলীয় এলাকা থেকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যগুলো পর্যায়ক্রমে নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলশ্রুতিতে, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যগুলি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার জন্য, পরিবেশ অধিদপ্তর ১২টি উপকূলীয় জেলা (বাগেরহাট, বরগুনা, ভোলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, খুলনা, লক্ষিপুর, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, পিরোজপুর এবং সাতক্ষীরা) এবং চট্টগ্রামের ৮টি এলাকায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার বন্ধ করার জন্য ২০২১ সালে তিন বছর মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
সভাপতির বক্তব্যে এসডোর চেয়ারপারসন ও সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ‘এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্লাস্টিক-দূষিত দেশ। প্লাস্টিক পরিবেশের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। আমরা ইতিমধ্যেই পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করেছি। আমাদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, প্লাস্টিক দূষণ এমন একটি সমস্যা যা আমরা সমাধান করতে পারি না। আমরা ইতিমধ্যেই পলিথিনের ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছি। তা সত্ত্বেও, আমরা প্লাস্টিক দূষণের সমস্যা মোকাবেলা করতে পিছিয়ে আছি। বিশ্বব্যাপী পলিথিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করা প্রথম দেশ হিসাবে আমাদের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে আমাদের প্লাস্টিক দূষণের অবসান ঘটাতে হবে এবং এই বিষয়ে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত সচিব মো. সেলিম রেজা বলেন, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হলে শুরুতেই প্লাস্টিক বর্জ্যকে এর উৎস থেকে আলাদা করতে হবে। আমাদের যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তোলা সম্ভব যা, প্লাস্টিকের সম্ভাব্য ক্ষতি কমাতে সাহায্য করবে। একটি বৃহত্তর ইতিবাচক পরিবর্তন সাধনে, আমাদের সবাইকে এখনই এগিয়ে আসতে হবে।
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, বৈশ্বিক প্লাস্টিক চুক্তি কেবল একটি কাগজের টুকরো নয়; আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলিও এখন প্লাস্টিকের আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্রকে ধ্বংস করছে এবং আমাদের সমুদ্র সৈকতগুলোকে দূষিত করছে। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা যা প্রতিটি দেশ, গোষ্ঠী এবং ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে। তবে, এই বিপর্যয় সত্ত্বেও বিশ্ব প্লাস্টিক চুক্তি আশার আলো হিসেবে কাজ করছে।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামিম আহমেদ বলেন, গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবেশের উপর একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ক্ষতিকারক প্রভাব ক্রমবর্ধমানভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বর্তমানে, বেশ কয়েকটি বিখ্যাত সুপার শপ রিফিল সিস্টেম চালু করেছে এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দূষণের সমস্যা সমাধানে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।