চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জনগণ সাফল্য বা ব্যর্থতার বিচার করবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সরকারের ব্যর্থতা থাকলে তা যাচাইয়ের ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়ে কোন ধরনের ব্যর্থতা থাকলে তা খুঁজে বের করার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সরকারের সফলতা বা ব্যর্থতা যাচাই করবে দেশের জনগণ। এটা যাচাই আমার দায়িত্ব নয়। তবে, সততা ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে জনগণের কল্যাণ বিবেচনা করে কাজ করলে ব্যর্থ হব কেন?’

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ৩০ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ উত্তরদানের পাশাপাশি তাকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, সততা নিয়ে কাজ করলে ব্যর্থ হতে হবে কেন? প্রশ্নকর্তার যখন এতই আগ্রহ তাহলে আমার ব্যর্থতাগুলো আপনিই খুঁজে বের করে দিন, আমি সংশোধন করে নেব।

তার রাজনৈতিক জীবনের ইতিবৃত্ত তুলে ধরে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার ঘটনা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতার আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয় নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলাম। চারণের বেশে সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি। বাংলাদেশকে চিনেছি, জেনেছি। সরকার গঠনের পর তৃণমূলের মানুষ যাতে ভালো থাকে সেই আকাক্সক্ষা নিয়েই কাজ করেছি। তার সুফল এখন জনগণ পাচ্ছে।

তিনি বলেন, ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশে যে আমূল পরিবর্তন সেটা আমরা বয়োবৃদ্ধ যারা আছি তারা জানি। কিন্তু, আজকের প্রজন্ম জানবে না। যদি সততা নিয়ে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে জনগণের কল্যাণে কি কাজ করতে হবে- সেটা বিবেচনা করে যদি কাজ করা যায়, তাহলে ব্যর্থ হবো কেন?

কোথায় সাফল্য, কোথায় ব্যর্থতা সেটা জনগণই বের করবে।ইতিহাস বিকৃতকারীদের বিচারের আওতায় আনা প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির অপর সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের বিচার করতে গেলে তো কাকে রেখে কাকে বিচার করবো সেটাই একটা প্রশ্ন। ’৭৫ পরবর্তী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা সবাইতো ইতিহাস বিকৃত করেছে। যারা ইতিহাস বিকৃতি করেছে ইতিহাসই তাদের বিচার করে দিয়েছে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।

তিনি বলেন, মিথ্যা দিয়ে সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না। যারা ইতিহাস বিকৃতি করেছে তাদের চরিত্রটা মানুষের কাছে প্রকাশ পেয়েছে। কত জঘণ্য কাজ তারা করে গেছে। তাই, যারা সত্যটাকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকতে চেয়েছিল তারাই আজকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে চলে গেছে। সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। সত্য অনেক কঠিন। তবে, এর জয় অবসম্ভাবী। বিচার প্রাকৃতিকভাবেই তাদের হচ্ছে। সত্য ইতিহাস আর কেউ বিকৃত করতে পারবে না।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান বন্দী যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করে দেয়। তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। সংবিধানের দু’টি ধারায় পরিবর্তন এনে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। ভোটের অধিকার দেয়।

সংসদ নেতা বলেন, জিয়াউর রহমান গোলাম আযমসহ অনেক যুদ্ধাপরাধীকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব দেয়। জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের উপদেষ্টা বানায়, মন্ত্রী বানায়। তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে এদের কেবিনেটে স্থান দেয়, মন্ত্রী বানায়। এভাবে যুদ্ধাপরাধীদের প্রশ্রয় দেয়া একটি জাতির জন্য কলঙ্কজনক। তিনি বলেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যারা জিয়ার সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি ছিল না তাদের নাম বাদ দেয়া, অপমানিত করা এবং যারা মুক্তিযোদ্ধা নয় তাদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান তারা দিতে চায়নি।

’৭৫ এর পরে এমন একটা সময় গেছে যে মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে সেটা বলতেও ভীতসন্তস্ত্র ছিল উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, তখন একে একে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করা হয়। চাকুরিচ্যূত করা হয়েছে, অপমানিত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিও দেয়া হতো না। এমন ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসও বিকৃতি করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলা হয়। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে অনেকগুলো ইতোমধ্যে পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যাতে তালিকায় থাকে সেই প্রচেষ্টা করার।