আধিপত্য বিস্তারের অশুভ তৎপরতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর তিন পার্বত্য জেলায় ছিল স্থিতাবস্থা। উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা পার্বত্য চট্টগ্রামে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়া স্পর্শ করে। পার্বত্য এলাকার অধিবাসীদের জীবনমানেও আসে পরিবর্তন। কিন্তু এখনও পাহাড়ি সংগঠনগুলোর সশস্ত্র কার্যকলাপ ও সংঘর্ষে প্রায়ই রক্ত ঝরছে।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে পার্বত্য জনসংহতি সমিতির শান্তিচুক্তি সাক্ষর হয়। শান্তিচুক্তির বিষয়টি পাহাড়ের অনেকে মেনে না নিলেও জনসংহতি সমিতি ও সরকারের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় পাহাড়ে খুনোখুনি কিছুটা বন্ধ হয়। কিন্তু বছর যেতে না যেতেই পাহাড়ে অশান্তি পুনরায় শুরু হয়। শান্তি চুক্তি মেনে না নেওয়া অংশটি ১৯৯৮ সালে গঠন করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এরপর ইউপিডিএফ’র সঙ্গে জনসংহতি সমিতির প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এক গ্রুপের হাতে অন্য গ্রুপের সদস্যরা প্রাণ হারাতে থাকে।
সম্প্রতি দুই যুগ আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশকারী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা হানাহানি বন্ধে নতুন চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে৷ গত ৯ জুন খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার ২ নম্বর চেঙ্গী ইউনিয়নের বড়কলক এলাকায় এক অনুষ্ঠানে ইউপিডিএফের পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতা উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা নতুন চুক্তির দাবিনামা হস্তান্তর করেন। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, চুক্তির আকারে পেশ করা ইউপিডিএফের দাবিনামায় আটটি ভাগ আছে৷ ৬৬ পৃষ্ঠার ওই প্রস্তাবে মোট ৮৭টি দাবি এবং প্রত্যেক দাবির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বিষয়টি খুবই ইতিবাচক।
তবে নতুন এই উদ্যোগের পরেও থেমে নেই প্রাণহানির ঘটনা। গত ২৪ আগস্ট বুধবার রাঙ্গামাটির লংগদুর কাট্টলীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস ও ইউনাইটেড পিপলস অব ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ এর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম শ্যামল চাকমা বলে দাবি করেছে ইউপিডিএফ। আজ ২৬ আগস্ট আবারও পাহাড়ে গোলাগুলির সংবাদ পাওয়া গেছে, হতাহতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১৯৯৭ সালের শান্তি চুক্তির ৭৭টি শর্তের মধ্যে বেশিরভাগ শর্ত বিভিন্নভাবে মানা হয়েছে বলে বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে জানা গেছে। নানা কারণে বাকি শর্তগুলো মানার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা লেগে আছে। এছাড়া পাহাড়ের বিভিন্ন সংগঠনের ভেঙে নতুন দল তৈরি ও তাদের নেতৃত্বের আদর্শিক দ্বন্দ্বের কারণে নানা অশান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সাম্যভাব বজায় রাখার পাশাপাশি বাস্তবতার নিরিখে শান্তি বজায় রাখতে প্রশাসন ও সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।