ফেসবুকের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতা, সহিংসতা ও ঘৃণা ছড়ানোর মতো নানান ঘটনায় উস্কানির অভিযোগ বহুদিনের। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে-সহ একাধিক দেশের ক্ষেত্রে সেই অভিযোগ বারবার উঠেছে। এরপরও ফেসবুক এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি বা নিয়েছে বলে দেখা যায়নি।
এমন প্রেক্ষাপটে ফেসবুকের মূলপ্রতিষ্ঠান মেটার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ‘সন্ত্রাসবাদ ও বিপজ্জনক সংগঠনবিরোধী’ প্রধান নবাব ওসমান গতকাল সোমবার ভার্চ্যুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে যা দেখা যাচ্ছে, তা দেশটির অফলাইন বাস্তবতারই প্রতিফলন।’
তার এমন মন্তব্যের অর্থ হলো, তিনি সরাসরি নিজের প্রতিষ্ঠান ফেসবুককে কোনোভাবেই দায়ী করতে চাচ্ছেন না। বরং পরোক্ষভাবে দায় এড়িয়ে গেছেন। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে কিছু সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় দেখা গেছে, ফেসবুক এবং মেসেঞ্জার ব্যবহার করে ভুয়ো আইডি খুলে তা সারাদেশে দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর তা রোধ করতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপও ছিল না মেটা। একই ধরনের ঘটনা আরও অনেক দেশেও দেখা গেছে।
তবে নবাব ওসমান স্বীকার করে নিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা বন্ধে মেটাকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এ জন্য প্রান্তিক পর্যায়ে সহনশীলতা বাড়াতে নানান ধরনের কাজও করছেন তারা। যে কাজে নাগরিক সমাজকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমন কি বাংলাদেশে চরমপন্থা মনিটরিংয়ের জন্য বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি, বোঝেন; মন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

নবাব ওসমানের এসব কথা আসলে এক ধরনের সাফাই। তবে এটা সত্যি বেশিরভাগ ঘটনায় ফেসবুক-মেসেঞ্জারকে ব্যবহার করা হয়েছে। আবার ‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে যা দেখা যাচ্ছে, তা দেশটির অফলাইন বাস্তবতারই প্রতিফলন।’ তার এই বক্তব্যকেও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। একদল মানুষ আছেন, যারা সরকার বা কোনো রাজনৈতিক দলকে বিপদে ফেলতে সাম্প্রদায়িক রঙ লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে। যার বলি হয় নিরীহ সাধারণ মানুষ।
তাই সবার আগে এই অফলাইন বাস্তবতাকে মোকাবিলা করতে হবে। আর এ জন্য মানুষকে আরও সচেতনা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে যে কোনো ধর্মীয় ইস্যুতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এমন কোনো পোস্ট করা যাবে না, যাতে কারো ধর্মীয় অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এ জন্য পারস্পরিক সম্মান, শ্রদ্ধা বাড়াতে হবে। তবেই এ থেকে মুক্তি মিলবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
আমরা মনে করি, এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেটার দায়িত্বও অনেক। এসব নিয়ে তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। সর্বোপরি সতর্ক হতে হবে সরকারকে। যারা এসব কাজে জড়িত, তাদেরকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। তবেই শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল কিংবা অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসদের সম্মান আমরা রক্ষা করতে পারবো।