বায়ুদূষণে দিল্লির আবহাওয়া অনুকূলে নেই। সেটা এড়িয়ে মাঠে জমে উঠেছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা লড়াই। ৭ ম্যাচে টানা ৬ হারে হতশ্রী যেমন টাইগাররা, শ্রীলঙ্কাও সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। জিতেছে কেবল দুটিতে। নিজেদের অষ্টম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দুদল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কোয়ালিফাই করার লড়াইয়ে টিকে থাকায় চোখ রেখে। তাতে লঙ্কানদের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষার মুখে টিম টাইগার্স। চারিথ আসালাঙ্কার সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে ২৮০ রানের লক্ষ্য দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে টসে জিতে লঙ্কানদের ব্যাটে আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ৪৯.৩ ওভারে ২৭৯ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
ম্যাচে ঘটেছে দুর্লভ এক ঘটনা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার টাইমড-আউটের দেখা মিলেছে। ২৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সামারাবিক্রমাকে আউট করেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব। পরে ব্যাট করতে নামেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। যার কিছুক্ষণ পর কোনো বল না খেলেই আউট হয়ে ফিরে যেতে হয় লঙ্কান অভিজ্ঞ তারকাকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসেবে টাইমড-আউট হয়ে ক্রিজ ছাড়েন ম্যাথুজ।
সতীর্থের আউটের পর ঠিকঠাক সময়েই মাঠে এসেছিলেন ম্যাথুজ। একসময় ব্যাট করারও প্রস্তুতি নেন। হেলমেট আঁটসাঁট করতে ফিতায় টান দেন ব্যাটিং পজিশন নেয়ার আগে। তখন হেলমেটের ফিতার একপাশ ছিঁড়ে যায়।
ম্যাথুজ তখন ড্রেসিংরুমের দিকে নতুন হেলমেটের ইঙ্গিত করেন। মাঠ আম্পায়ারকে বলেন যে ভুল হেলমেট নিয়ে ঢুকে পড়েছেন, ফিতা ছেঁড়ার বিষয়টি অবগত করেন। ড্রেসিংরুম থেকে এক সতীর্থ ম্যাথুজের জন্য আরেকটি হেলমেট নিয়ে মাঠে ঢুকে পড়েন। সেই সময় সাকিব টাইমড-আউটের আবেদন জানান মাঠ আম্পায়ারের কাছে। আম্পায়ার নিয়ম মেনে ম্যাথুজকে আউট ঘোষণা করেন।
এমসিসির ক্রিকেট আইনের ৪০.১.১ ধারা অনুযায়ী ‘টাইমড-আউট’র ব্যাপারে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাটার আউট হওয়ার পর নতুন ব্যাটার ক্রিজে এসে যদি ৩ মিনিটের মধ্যে কোনো বল মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত না হন, তবে তিনি টাইমড-আউট হবেন। সেই নিয়মে ম্যাথুজকে সাজঘরে ফিরে যেতে হয় কোনো বল না খেলেই।
তবে আইসিসির বিশ্বকাপ নীতিমালায় বলা হয়েছে, টাইমড-আউটের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে নতুন ব্যাটার মাঠে আসার ২ মিনিটের মধ্যে। আম্পায়াররা যখন ম্যাথুজকে আউটের সিদ্ধান্ত দেন, ততক্ষণে বয়ে যায় প্রায় ৫ মিনিট। যার মধ্যে আম্পায়াররা লঙ্কান তারকাকে আউট দিতে প্রায় এক মিনিট সময় ব্যবহার করেছেন।
দিল্লিতে ম্যাচের প্রথম ওভারে শরিফুলের অফস্টাম্পের বাইরের বল খেলতে যেয়ে গড়বড় করেন ৪ রানে থাকা কুশল পেরেরা। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ ওঠে স্লিপের দিকে। বাঁ-দিকে অনেকটা ঝাঁপিয়ে উড়ন্ত ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক মুশফিক। শ্রীলঙ্কা ৫ রানে প্রথম উইকেট হারায়।
দ্বিতীয় উইকেটে পাথুম নিশাঙ্কা ও অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস ৬১ রান যোগ করেন। সাকিবের বলে লংঅনে শরিফুলের হাতে ক্যাচ দেন লঙ্কান দলপতি মেন্ডিস, তিনি ১৯ রানে ফিরলে জুটি ভাঙে।
১৩তম ওভারে দলীয় ৭২ রানে তৃতীয় আঘাত হানেন বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা তানজিম হাসান সাকিব। অফস্টাম্পের বাইরের বল উড়িয়ে মারতে যান আক্রমণাত্মক থাকা নিশাঙ্কা। আগেভাগেই ব্যাট চালানোয় করে বসেন গড়বড়। ব্যাটের নিচের কানায় লেগে বল স্টাম্পে আঘাত হানে। ৩৬ বলে ৮ চারে ৪১ রানের ইনিংস খেলে লঙ্কান ওপেনার বিদায় নেন।
২৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ১৩৫ রানে সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ফেরান সাকিব। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন লঙ্কান ব্যাটার। ৪২ বলে ৪১ রান করেন। এরপর টাইমড-আউট হয়ে ফিরে যান ম্যাথুজ।
পরে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে দলকে টেনে তোলেন আসালাঙ্কা। ৩৮তম ওভারের শেষ বলে সিলভাকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩৬ বলে ৩৪ রান করেন। ৪৬তম ওভারে মাহেশ থিকসানাকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। ৩১ বলে ২২ রান করেন তিনি।
৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন আশালাঙ্কা। ৬ চার ও ৪ ছক্কায় শতক ছুঁয়েছেন ১০১ বলে। পরের ওভারেই তানজিমের শিকার হয়ে ফেরেন আসালাঙ্কা। ১০৫ বলে ১০৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে থামেন। ওভারের শেষ বলে কাসুন রাজিথাকে ফেরান সাকিব।
ইনিংসের তিন বল বাকি থাকতে দুশমন্থ চামিরা ফিরে যান রানআউট হয়ে। ২৭৯ রানে থামে লঙ্কান ইনিংস।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব। শরিফুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসান নেন দুটি করে উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজ নেন একটি উইকেট।