চোটের কারণে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে ছিলেন না নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরেই দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন কিউই টপঅর্ডার ব্যাটার। ফেরার মঞ্চে ড্যারিল মিচেলকে সঙ্গী করে নিউজিল্যান্ডকে সহজ জয় উপহার দিলেন উইলিয়ামসন।
চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে বাংলাদেশকে ব্যাটে পাঠায় কিউই বাহিনী। ৯ উইকেটে ২৪৫ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জবাবে নেমে ৪২.৫ ওভারে ৮ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর করে নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খুব একটা বড় সংগ্রহটা খুব একটা বড় ছিল না বাংলাদেশের। তবে বল হাতে শুরুটা দারুণ ছিল টাইগার পেসারদের। শুরুতে তুলে নিয়েছেন উইকেটও। পরে দেখেশুনেই লক্ষ্য তাড়ার পথে হাঁটে নিউজিল্যান্ড।
বল হাতে দুর্দান্ত শুরু পেয়েছিলেন টাইগার পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজ। মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান রাচিন রবীন্দ্র।
টাইগার বোলারদের মোকাবেলায় পাওয়ার প্লেতে সংগ্রাম করতে হয়েছিল ডেভন কনওয়ে ও কেন উইলিয়ামসনকে। পাওয়ার প্লে’র দশ ওভারে ৩৭ রান তোলেন দুই কিউই ব্যাটার।
এরপর থেকে অবশ্য দেখেশুনেই রান তুলছিলেন কনওয়ে ও উইলিয়ামসন। ২১তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ৯২ রানে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন ডেভন কনওয়ে। সাকিবের শিকার হওয়ার আগে করেছেন ৫৯ বলে ৪৫ রান।
২৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ফিফটি পূর্ণ করেন উইলিয়ামসন। ৩৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মোস্তাফিজকে মোকাবেলা করতে গিয়ে হাতে আঘাত পান কিউই অধিনায়ক। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফেরার আগে ১০৭ বলে ৭৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে জয়ে ভিত গড়ে দেন।
এরপর ৪২.৫ ওভারে গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন ড্যারিল মিচেল। ৬৭ বলে ৮৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। ফিলিপস অপরাজিত ছিলেন ১৬ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটে নেমে রানের খাতা না খুলেই ড্রেসিংরুমে ফিরে যান লিটন দাস। ট্রেন্ট বোল্টের করা ম্যাচের প্রথম বলে ফ্লিকে বাতাসে বল ভাসান। স্কয়ার লেগে থাকা ম্যাট হেনরি খানিকটা শারীরিক ভারসাম্য হারালেও বল ধরতে ভুল করেননি। শূন্যরানে প্রথম উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে আশা জাগালেও বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তানজিদ হাসান তামিম। তিনি নিজেকে মেলে ধরতে হচ্ছেন ব্যর্থ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসী শুরু করে ইনিংস বড় করতে পারেননি। লোকি ফার্গুসনের করা অষ্টম ওভারের শেষ বলে ফ্লিক করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে কনওয়ের হাতে ক্যাচ দেন। ১৭ বলে ৪টি চারে ১৬ রান করে যান তানজিদ।
দারুণ ছন্দে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ বড় ইনিংস খেলার সম্ভাবনায় ভালোই এগোচ্ছিলেন। এরপর তার যাত্রাভঙ্গ। ফার্গুসনের বলে ৩০ রান করে ডিপ স্কয়ার লেগে ম্যাট হেনরির তালুবন্দি হন, ৪৬ বলে ৪ চারের ইনিংস খেলে।
গ্লেন ফিলিপস ১৩তম ওভারে বল হাতে নিয়েই পান সাফল্য। লেগ সাইডে শট খেলেন ৭ রান করা শান্ত। মিড উইকেটে দারুণ ক্যাচ নেন কনওয়ে। দ্রুত ৪ ব্যাটার হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
খাদের কিনারা থেকে টাইগারদের টেনে তোলেন সাকিব ও মুশফিক। ২৭তম ওভারের প্রথম বলে ফার্গুসনের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন মুশফিক। ৫২ বলে ফিফটি ছোঁয়া ইনিংসে ৫টি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
৩০তম ওভারে লোকি ফার্গুসনের উপর চড়াও হন সাকিব। চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকান মিডঅনের উপর দিয়ে। পরের বলেও একইভাবে খেলতে গিয়ে টপ এজ হয়ে ধরা পড়েন টম ল্যাথামের হাতে। ৫১ বলে ৪০ রান করে ফিরে যান সাজঘরে।
সাকিব ফেরার পর তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে ভালোভাবে এগোচ্ছিলেন মুশফিক। ৩৬তম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ১৭৫ রানে হেনরির শিকার হন মুশফিক। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৫ বলে ৬৬ রান করে ফিরে যান বোল্ড হয়ে।
৩৮তম ওভারের পঞ্চম বলে বোল্টের দ্বিতীয় শিকার হন হৃদয়। ২৫ বলে ১৩ রান করেন। হৃদয়ের উইকেট তুলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২০০তম উইকেট পূর্ণ করেন বোল্ট। ১০৭ ইনিংসে এমন মাইলফলক স্পর্শ করেন কিউই পেসার।
৪২তম ওভারের পঞ্চম বলে তাসকিন আহমেদকে নিয়ে বোর্ডে বাংলাদেশের রান ২০০ পূর্ণ করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপর ভালোই খেলছিলেন তাসকিন। ইনিংস লম্বা করতে করতে পারেননি যদিও। দুই ছক্কায় ১৯ বলে ১৭ রান করে ফেরেন। ৪৫তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ২১৪ রানে ড্যারিল মিচেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে মিচেল স্যান্টনারের শিকার হন তাসকিন।
৪৮তম ওভারের শেষ বলে হেনরির দ্বিতীয় শিকার হন মোস্তাফিজ। উড়িয়ে মারতে গিয়ে টপ এজে ধরা পড়েন ল্যাথামের হাতে। ১০ বলে ৪ রান করেন। শরিফুল ইসলামকে নিয়ে ইনিংস শেষ করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। টাইগার তারকা অপরাজিত থাকেন ৪৯ বলে ৪১ রানে। শরিফুল ৩ বলে ২ রানে।
কিউইদের হয়ে তিনটি উইকেট নিয়েছেন লোকি ফার্গুসন। ট্রেন্ট বোল্ট ও ম্যাট হেনরি নেন দুটি করে উইকেট। মিচেল স্যান্টনার ও গ্লেন ফিলিপস নেন একটি করে উইকেট।