ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেডের উড়ন্ত উদ্বোধনী জুটির ব্যাটিং দেখেই বোঝা গিয়েছিল, বড় রানের নিচে চাপা পড়তে চলেছে নিউজিল্যান্ড। মাঝে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে কিউই বোলাররা উইকেট তোলার পাশাপাশি রানের গতি খানিকটা কমালেও তা ধরে রাখতে পারেনি। শেষ দিকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও প্যাট কামিন্সের টর্নেডো ইনিংসে ভর করে ব্ল্যাক ক্যাপসদের ৩৮৯ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য দিয়েছে অজিরা।
শনিবার টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া ৪৯.২ ওভারে ৩৮৮ রানে অলআউট হয়। ধর্মশালায় এটিই ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বাধিক দলীয় স্কোর। এর আগে চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের করা ৩৬৪ রানের রেকর্ডটি আজ ভেঙেছে।
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে কপাল চাপড়াতেই পারেন টম ল্যাথাম। শুরুতেই উইকেট তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার পরিকল্পনায় শুরুতেই পানি ঢেলে দিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। অফফর্ম থেকে দারুণ প্রত্যাবর্তনে চলতি ওয়ানডে বিশ্বকাপে সম্ভাবনা জাগিয়েও টানা তিন সেঞ্চুরির দেখা পাননি ওয়ার্নার। তবে চোট থেকে ফিরেই ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শতক তুলেছেন হেড।
মাত্র ৪.১ ওভারেই ক্যাঙ্গারুরা দলীয় ৫০ রানের দেখা পায়। ৮.৫ ওভারেই তা একশো রানের গণ্ডি ছাড়িয়ে যায়। ওয়ার্নার মাত্র ২৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন। হেড ছিলেন আরও আক্রমণাত্মক। কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে যুগ্মভাবে চলতি বিশ্বকাপে ২৫ বলে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি তোলেন।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে অজিদের হয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি পূরণ করেন হেড। ২০১৯ সালে ভারতের বিপক্ষে ২৫ বলে অর্ধশতক পান অ্যালেক্স ক্যারি। আফগানিস্তানের সঙ্গে ২১ বলে ফিফটি পেয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
ওয়ানডেতে প্রথম ১০ ওভারে তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরটি পায় অস্ট্রেলিয়া। লিডসে ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ১৩৩ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কা। ২০০৩ বিশ্বকাপে কানাডার সঙ্গে এক উইকেটে ১১৯ রান স্কোরবোর্ডে জমা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
রাচীন রবীন্দ্রের করা ১৭তম ওভারে দলীয় ১৫৫ রানেই ভাঙতে পারতো উদ্বোধনী জুটি। মিডউইকেটে থাকা গ্লেন ফিলিপস সহজ ক্যাচ মিস করায় ব্যক্তিগত ৭৫ রানে জীবন পান হেড। এর আগে মিচেল স্যান্টনারের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৭০ রানে হেড বেঁচে যান। সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেঞ্চুরি হাঁকাতে তিনি ভুল করেননি।
১৭৫ রানে এসে ভাঙে অজিদের উদ্বোধনী জুটি। ৬৫ বলে ৫ চার ও ৬ ছক্কায় ৮১ রান দিয়ে ফিলিপসের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ওয়ার্নার। এর খানিক পরই ৫৯ বলে চোট থেকে ফিরে আসা হেড সেঞ্চুরির দেখা পান। ফিলিপসের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৬৭ বলে ১০ চার ও ৭ ছক্কায় ১০৯ রানের ইনিংস খেলে ক্রিজ ছাড়েন।
ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালো করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি স্টিভেন স্মিথ। মিড অফে ফিলিপসের বলে ট্রেন্ট বোল্টের হাতে সহজ ক্যাচ উপহার দিয়ে আসার আগে তিনি ১৭ বলে ২ চারে ১৮ রান তুলতে সক্ষম হন।
স্মিথের বিদায়ের পরপরই সাজঘরে ফিরতে পারতেন মার্নাস লাবুশেন। ব্যক্তিগত এক রানের মাথায় বোল্টের বলে আপার কাট করেছিলেন অজি ব্যাটার। থার্ড ম্যানে ড্যারিল মিচেল বল তালুবন্দি করতে পারেননি।
অল্প সময়ের ব্যবধানে জোড়া আঘাত হানেন মিচেল স্যান্টনার। বোল্ড হওয়ার আগে ৫১ বলে ২ চারে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন মিচেল মার্শ। ব্যক্তিগত ১৮ রানে ডিপ মিড উইকেটে রাচীনের হাতে ধরা পড়েন লাবুশেন।
বাইশ গজে নেমেই তাণ্ডব চালান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শেষদিকে রানের গতি বাড়িয়ে দলের স্কোর বিশাল সংগ্রহের দিকে এগিয়ে নিতে থাকেন। জস ইংলিশের সঙ্গে ম্যাক্সওয়েল ষষ্ঠ উইকেটে দ্রুত ৫১ রান যোগ করেন। জেমি নিশামের বলে লং অনে বোল্টের তালুবন্দি হওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার ২৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন।
অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও মেরে খেলতে থাকেন। জস ইংলিশও তাকে সঙ্গ দিতে থাকেন। নিশাম ৪৮তম ওভারে চারটি ছক্কা হজম করেন, ব্যয় করেন ২৭ রান। ওভারের পঞ্চম বলটিতে ডিপ স্কয়ারে ক্যাচ দিয়েও কামিন্স বেঁচে যান।
ট্রেন্ট বোল্ট ৪৯তম ওভারে ইংলিশ, কামিন্স ও অ্যাডাম জাম্পার উইকেট তুলে নিলে অস্ট্রেলিয়ার চারশো রান পাওয়ার পথ অনেকটাই রুদ্ধ হয়। মাত্র ১৪ বলে ২ চার ও ৪ ছক্কায় ৩৭ রান করেন কামিন্স। ২৮ বলে ৪টি চার ও এক ছক্কায় ৩৮ রানের ইনিংস খেলেন ইংলিশ। শেষ ব্যাটার হিসেবে রানের খাতা না খোলা মিচেল স্টার্ক আউট হলে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা অলআউট হয়।
কিউইদের পক্ষে ফিলিপস ৩৭ রান খরচায় দেন ৩ উইকেট। বোল্ট ৩ উইকেট পেলেও ৭৭ রান ব্যয় করেন। স্যান্টনার পান দুটি উইকেট।