দেশ যখন করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক সংকটের কঠিন সময় পার করছে, তখন ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার বদলে কতিপয় ব্যক্তি সাম্প্রদায়িক হামলার মাধ্যমে আরও সংকটময় করে তুলছে। নড়াইলের এ ঘটনায় ক্ষত এখনও দগদগে। বরাবরের মতোই ঘটনাক্রমও বলতে গেলে একই।
চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদনে জানা যায়, ‘‘নড়াইলের দিঘলিয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি, দোকান ও মন্দির ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়ার ঘটনায় ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যে তরুণের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ধর্ম অবমাননার পোস্ট দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তার বাবাকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। লোহাগড়া প্রশাসন জানিয়েছে, ফেসবুক আইডিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়ার এক তরুণের নামে একদিন আগে খোলা একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ধর্ম অবমাননার পোস্ট দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে কুমড়ী গ্রামে উত্তেজনা দেখা দেয়। শুক্রবার ওই কলেজ ছাত্রের খোঁজে তার বাবার মুদি দোকানে যায় স্থানীয়রা। না পেয়ে তারা দোকান ভাঙচুর করে। বিকেল থেকে দিঘলিয়ার সাহাপাড়া ঘিরে রাখে তারা। সন্ধ্যায় কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এলাকার একটি মন্দিরও ভাঙচুর হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। অভিযুক্ত তরুণের বাবাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আজগর জানান: অভিযুক্ত তরুণ বলেছে, পোস্টটি তার নয়। ফেইসবুক অ্যাকাউন্টটিও আগেরদিন খোলা হয়েছে। এ বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আইনী পদক্ষেপ নেবে প্রশাসন।এলাকায় মোতায়েন রয়েছে দু’শর বেশি পুলিশ সদস্য।’’
এমন ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ভীষণ মর্মাহত বলে জানিয়েছেন। ‘সেই নড়াইলের সঙ্গে এই নড়াইলকে মেলাতে পারছেন না’ বলে আক্ষেপ তার। এলাকাবাসীকে জেলাটির হাজার বছরের ঐতিহ্য-সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। অজ্ঞতা হোক কিংবা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এসব ঘটনার শাস্তি আইনের মাধ্যমে নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন মাশরাফী। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব বিষয়ে কঠোর হতে অনুরোধ করেছেন। সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করতে বলেছেন ইমামদের। এতে আশা করা যায় যে, ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত দোষী এবং সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও দক্ষতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে বলে আমরা মনে করি। একইসাথে যাচাই বাছাই ছাড়া কিংবা একজনের অপরাধে পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া, ভাঙচুর করা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এজন্য সবাইকে বিবেচনাপ্রসূত কাজ করতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের ক্ষতিপূরণ যদিও সম্ভব নয়, তবুও সরকার এবং সামর্থ্যবানদের তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এর পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী অপরাধীদের আইনের আওয়তায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে বলে আমরা আশাবাদী।