সোমালিয়ান জলদস্যুর হাতে জিম্মি থাকা বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ থেকে গোপনে একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান। জাহাজ মালিকের কাছে পাঠানো ৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের ওই অডিও বার্তাটি ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অডিওতে জাহাজের চিফ অফিসার জলদস্যুদের কবলে পড়ার সম্পূর্ণ ঘটনাটি বর্ণনা দিয়েছেন এবং জাহাজ ও তাদের বর্তমান পরিস্থিতিও জানিয়েছেন।
গোপন অডিওবার্তায় আতিকুল্লাহ খান তার মালিককে উদ্দেশ্য করে বলেন,
‘আসসালামুলাইকুম স্যার, আমি চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান বলছি।
আজকে সকালে জাহাজের সময় আনুমানিক সাড়ে ১০টার সময় একটা হাইস্পিড বোট আমাদের দিকে আসছিল। সঙ্গে সঙ্গে আমরা এলার্ম দিয়ে ব্রিজে গেলাম। ওখান থেকে পরে সিটে চলে গেলাম। ক্যাপ্টেন স্যার ও সেকেন্ড অফিসার ব্রিজে ছিল। আমরা ঝিকঝাক কোর্স করলাম। তারপর এএসএস-এ করলাম। ইউকে এমটিকেও ট্রাই করলাম। কিন্তু তারা ফোন রিসিভ করেনি। এর মধ্যে জলদস্যুরা চলে আসলো।
চলে আসার পর ওরা ক্যাপ্টেন স্যার ও সেকেন্ড অফিসারকে জিম্মি করে। আমাদের ডাকল। আমরা সবাই আসলাম। আমাদের ডেকে কিছু গোলাগুলি করল। আমরা একটু ভয় পেয়েছি। সবাই ব্রিজে বসে ছিলাম। কারো গায়ে হাত তোলেনি। শুধু সেকেন্ড অফিসারকে একটু মারধর করেছে। তারপর আরেকটি স্পিডবোটে করে আরও কয়েকজন চলে আসল। এভাবে মুহূর্তেই প্রায় ১৫-২০ জন চলে আসে।
এর কিছুক্ষণ পরে একটি বড় ইরানিয়ান ফিশিং বোট নিয়ে আরও জলদস্যু চলে আসে। ইরানিয়ান ওই ফিশিং বোটটি এক মাস আগে তারা জিম্মি করেছিল। এটি দিয়ে তারা এক মাস ধরে নতুন কোনো জাহাজ জিম্মি করার জন্য সাগরে ঘোরাঘুরি করছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সামনে পড়ে গেলাম।
এই ফিশিং বোটের তেল শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের জাহাজে থাকা পাম্প দিয়ে কিছু ডিজেল নিয়ে ওই বোটে দিয়েছে তারা। তেল দেয়ার পর আমাদের জাহাজে উঠে জিম্মি করা ফিশিং বোটটিকে ছেড়ে দেয়।
তারপর ওরা আমাদের সেকেন্ড ও থার্ড অফিসারকে নিয়ে জাহাজের ইঞ্জিন রুমে যায়। তাদের নিয়ে গিয়ে জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়। এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে কারো কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জাহাজের কোনো ক্ষতি হয়নি। আমাদেরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে সবাই ভয়ে আছি। ওরা খুব ভয় দেখাচ্ছে।
আমাদের জাহাজে ২০-২৫ দিনের খাবার পানি আছে। প্রায় ২০০ মেট্রিক টনের মতো। সবাইকে বলেছি, এগুলো একটু সাবধানে ব্যবহার করতে। শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়ব আমরা। তবে, একটা সমস্যা হচ্ছে আমাদের জাহাজে কিছু কোল্ড কার্গো আছে। প্রায় ৫৫ হাজার টন। এগুলো একটু ডেঞ্জারাসও। ফায়ারেরও ঝুঁকি আছে। মিথেন বাড়ে। লাস্ট যখন অক্সিজেন মেপেছি তখন ৯-১০ শতাংশ লেভেল পেয়েছি। এটি নিয়মিত মনিটরিং করতে হয়। কোনো কারণে অক্সিজেন লেভেল বেড়ে গেলে বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে হবে। এটার একটু ব্যবস্থা করবেন, স্যার।
আমাদের জন্য দোয়া করবেন, স্যার। আমাদের পরিবারকে একটু দেখবেন, স্যার। সান্ত্বনা জানাবেন, স্যার। আসসালামুলাইকুম।’
জিম্মি হওয়া জাহজটি আগে‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচালিত হতো, পরে কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পরে এর নাম দেয়া হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। গত বছর এটি সংগ্রহ করে সাধারণ পণ্য পরিবহন করতে থাকে কেএসআরএম গ্রুপ। ২০১৬ সালে তৈরি হওয়া জাহাজটি লম্বায় ১৯০ মিটার।
আরও পড়ুন: জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজের ২৩ বাংলাদেশি নাবিকের পরিচয় মিলেছে