তখনও টাইব্রেকারে বিশ্বকাপ জেতার রেশ কাটেনি। ৩৬ বছরের শিরোপাখরা কাটিয়ে সোনালী ট্রফি উঁচিয়ে ধরার মুহূর্তও ক্ষণ গুনছে। তারও আগে পুরো বিশ্ব দেখেছে ফাইনালে হ্যাটট্রিকম্যান এমবাপে ও অনবদ্য মেসিকে পেছনে ফেলে এমিলিয়ানো মার্টিনেজের নায়ক বনে যাওয়া। বিশ্বজয়ের আনন্দ যখন অশ্রু হয়ে ঝরছিল তখন হয়ত সেই ছোটবেলার কথা স্মরণ করছিলেন মার্টিনেজ, না খেয়ে থাকা কিংবা ‘দরিদ্র’ বাবাকে কাঁদতে দেখার কথা তো নিশ্চয়।
লুসেইলে ফ্রান্সকে হারিয়ে শিরোপা উদযাপনে মাতার পর আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক বলেছেন শেকড়ের স্মৃতি, ‘সোনার গ্লাভস’ হাতে নিয়েও ভোলেননি অসহ্য দারিদ্রতার কথা। ফাইনালে নামার আগেও টেনেছেন সেটা, প্রত্যয়ের সঙ্গে শুনিয়েছিলেন, ‘৯০ হাজার দর্শকের সামনে পরিবারকে গর্বিত করতে চাই।’ ফরাসিদের হারিয়ে কাজটি করে ফেলেছেন মার্টিনেজ, অমূল্য জয়টি কাছের মানুষদেরই দিয়েছেন, ‘অনেক দরিদ্র পরিবার থেকে এখানে এসেছি। এই জয় পরিবারকে উৎসর্গ করতে চাই।’
মার্টিনেজের জন্ম বুয়েন্স আয়ার্সের মার ডেল প্লাটাতে। মোটেও সোনার চামচ মুখে নিয়ে নয়, জন্ম হয়েছিল হতদরিদ্র এক পরিবারে। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো। মার্টিনেজ দেখেছেন তার বাবা আলবার্ট বিভিন্ন বিল শোধ করতে না পেরে কাঁদছেন। অনেক রাতেই তাদের টেবিলে খাবার থাকতো না। ছোটবেলা থেকে মার্টিনেজ নিজ পরিবারের ভাগ্য বদলের শপথ নেন। মুখে খাবার তোলার শপথ নেওয়া বালকটি আজ আর্জেন্টিনার ইতিহাস গড়ে দিল।
মার্টিনেজের ফুটবল ক্যারিয়ারের সূচনা হয় আর্জেন্টিনার পেশাদার ফুটবল দল অ্যাটলেটিকা ইনডিপেনডিন্টের হয়ে। এরপর ২০১১ সালে ইংল্যান্ডে এসে যোগ দেন আর্সেনালে। কিন্তু ভাষাগত (ইংরেজি না জানা) সমস্যা তার চলার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ভাগ্যেও যেন গিঁট পড়ে। মাঠে নামার সুযোগ আর আসে না।
এরমধ্যে বিভিন্ন ক্লাবে ধার করা গোলরক্ষক হিসেবে খেলেন। পেশাদারী ফুটবলে মার্টিনেজের মাঠে অভিষেক হয় ১২ সালের ৫ মে অক্সফোর্ড ইউনাইটেড ক্লাবের হয়ে। ২০১৯ সালে ভাগ্য কিছুটা খুলে মার্টিনেজের। আর্সেনালের হয়ে ন্যাশনাল কাপে খেলার সুযোগ পান। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে গত বছর মার্টিনেজ বিশ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে যোগ দেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এস্টনভিলাতে, অভিষেক হয় গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর।
বড় পর্যায়ে খেলতে নেমে সেফিল্ড ইউনাইটেডের বিপক্ষে চমক দেখান। এ ম্যাচে ‘টাইব্রেকার স্পেশালিস্ট’ রুখে দেন একটি পেনাল্টি। এস্টনভিলার হয়ে এ পর্যন্ত মোট ৩৮টি ম্যাচ খেলেছেন। প্রথম সেশনে এস্টনভিলার সমর্থকদের ভোটে প্লেয়ার অফ দ্য সেশনও হয়েছেন। জাতীয় দলে ডাক পেলেও বেঞ্চ গরম করে থাকতে হয় তাকে। ৩ জুন চিলির বিপক্ষে অভিষেক ঘটে। এরপর থেকে ছুটে চলা। কোপা আমেরিকার পর ফিফা বিশ্বকাপেও আলবিসেলেস্তে দলের আস্থার মান রাখলেন, নিজের দারিদ্রতার মান রেখেছেন। ‘গরীব’ এমিলিয়ানো মার্টিনেজ এখন বিশ্বের সেরা গোলরক্ষক।