অস্ট্রেলিয়ার ভিকটোরিয়া রাজ্যের ব্যাকাশমার্সে রয়েছে চমৎকার এক বাঙালি-একান্নবর্তী পরিবার। এটি পাহাড়েঘেরা, পাহাড়চূড়ার ‘কৃষ্ণা কুটির’ এর কথা। চক্রবর্তীদের এ পরিবারটি এখনো এই প্রবাসেও মা-বাবা-ভাই-বোন নিয়ে পুরোনো দিনের এক সুখী যৌথ পরিবার।
এ বাড়ির ‘মা’ কৃষ্ণা চক্রবর্তী, ‘বাবা’ অজয় চক্রবর্তী, পুত্র সানি সঞ্জয়, পুত্রবঁধু উর্মি ভট্যাচার্য, কন্যা ইতিকা ইতু, জামাতা চন্দন চক্রবর্তী আর তাদের কিছু বন্ধু বান্ধব মিলেই আজ থেকে ৯ বছর আগে প্রথম শুরু করেন এক ঘরোয়া দূর্গা পূজা।
সেই প্রথম বছরেই তিথি-নক্ষত্র মেনে, দেশ থেকে পুরোহিত এনে, নিয়ম নিষ্ঠায় করেন পূজা-পালন। আন্তরিক আতিথেয়তায়, সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক আবহে ‘কৃষ্ণা কুটির’ এর এই আয়োজন সকলকে এক ঝলকে নিয়ে যায় অন্যরকম এক উৎসবের আলোকছটায়!
সেই শুরু! তারা ভেবেছিলেন বছর তিনেক এ ঘরোয়া আয়োজন চালিয়ে যাবেন। কিন্তু না; আর থামতে পারেননি। কয়েক বছর আগে বাড়ি পরিবর্তনে মেলবোর্নের মূল শহর থেকে অনেকখানি দূরে চলে এলেও, মানুষের ভালোবাসা তাদেরকে সকলের কাছেই রেখেছে। প্রতি বছর শারদীয় পূজা এলে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের ঢল নামে কৃষ্ণা কুটিরে। প্রতি বছর শ’ খানিক মানুষ যেন আরও বাড়ছে এ আয়োজনে।
উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে জিজ্ঞাসা করলে জানা যায়, এখানে আসতে তাদের ভালো লাগে কারণ শৈশবের ‘বাড়ির পূজা’র অনুভূতিটুকু এই উৎসবে ফিরে পান। ঘরোয়া আয়োজনে গানবাজনা, মিষ্টি মধুর খানাপিনা তো আছেই; সাথে বাড়তি পাওনা হিসেবে থাকে দেশী আড্ডা!
প্রবাসীর দূর্গাপূজা মানেই বিশাল কোনো হলরুম ভাড়া করে, মণ্ডপ বানিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষের আনন্দ-যজ্ঞের আয়োজন। দেশে পাড়ার মন্দিরে মন্দিরে আয়োজিত পুজা’র সাথে এর কিছুটা মিল পাওয়া যায়। প্রবাসের মাটিতে এটুকুও কিন্তু কম কিছু নয়! তবু আবেগী মানুষের মন পড়ে থাকে, বনেদি ধারায় পালিত সেই ‘বাড়ির পুজোয়’।
বাড়ির নিজস্ব পূজামণ্ডপে, দেশীয় আবহে, শয়ে শয়ে মানুষকে পূজোৎসবের অংশ করে ‘কৃষ্ণা কুটির’ এর এ উদ্যোগ তাই হয়ে উঠছে ব্যতিক্রমী এক মিলনমেলার আয়োজন। এ ক’বছরেরই চক্রবর্তী পরিবারের পারিবারিক আয়োজনটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মেলবোর্ন-প্রবাসী অনেকেই সমস্বরে বলে ওঠেন ‘আসছে বছর আবার হবে!’