চলমান সংকটে অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে উদ্যোক্তাদের জন্য ৫৫ হাজার কোটি টাকার নতুন দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে এসএমই খাতের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার আবর্তনশীল তহবিল এবং শিল্প ও সেবা খাতের বড় উদ্যোক্তাদের জন্য রয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। বিষয়টি খুবই ইতিবাচক।
এরআগে ২০২০ সালে করোনার চরম প্রকোপের সময় থেকে পরবর্তী বছরগুলোতে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে কয়েক দফায় ২ লাখ কোটি টাকার অনেকগুলো প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল–সুবিধা দেওয়া, ব্যাংক–ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল, কাঁচামাল আমদানিতে সহায়তা ও প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট দিয়েছিল ওইসব প্যাকেজের আওতায়। দেশে চলমান সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে সরকার প্যাকেজ ভেদে অর্ধেকের বেশি হারে ভর্তুকি দিয়েছিল। যা সেময় কিছুটা স্বস্তি তৈরি করেছিল দেশের গার্মেন্টসসহ বড়-মাঝারি নানা শিল্পে।
প্যাকেজের ব্যবহার ও প্রভাব নিয়ে যদিও রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। প্রণোদনা হিসেবে ঘোষিত ওইসব প্যাকেজ সেসময় দেশের অর্থনীতিতে তারল্য সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি চাঙ্গা হয়েছিল পুঁজিবাজার। এছাড়া আমদানি বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে বেড়েছিল চলতি হিসাবে ঘাটতিও। ডলারের চাহিদা বাড়ার প্রভাবে সেসময় থেকেই আসলে অবমূল্যায়ন হতে থাকে টাকার। সব মিলিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্যকে চাপে ফেলার ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্যাকেজেরও বড় ভূমিকা ছিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সেইসাথে প্রণোদনা সুবিধাভোগী নানা প্রতিষ্ঠান মালিকদের অনেকে পরে প্রতিষ্ঠান বিক্রি নয়তো বন্ধের পথে হেঁটেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর হয়েছে।
করোনার কারণে তৈরি হওয়া সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন নিয়েও নানা নেতিবাচক পরিসংখ্যান দেখা গেছে। এছাড়া অতিক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা প্রচলিত ব্যাংকিং কার্যক্রমের মধ্যে না থাকার কারণে হিসেবেই আসেনি ওই প্যাকেজের। অথচ তাদের অবদান কোনভাবেই কম না দেশের অর্থনীতিতে। এবিষয়গুলো সেসময় আলোচিত হয়েছিল এবং বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ফলাফল আসলে কী হয়েছে, তা কেউ জানে বলে মনে হয় না।
এবারের ৫৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের ক্ষেত্রেও ছোট উদ্যোক্তাদের স্বার্থের বিষয়ে চিন্তিত অর্থনীতিবিদরা। ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ পেতে আয়কর বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান ছোট উদ্যোক্তাদের ব্যাংকমুখী হওয়ার বদলে এনজিও কিংবা মহাজনী ঋণের দিকে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। আমরাও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত, রাষ্ট্রের অর্থে পরিচালিত সাহায্য-সহযোগিতা প্রান্তিক পর্যায়ে না পৌঁছালে দেশের সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে বলে আমরা মনে করি। আমাদের আশাবাদ, বিষয়গুলো নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ মনোযোগী হবেন।