নিজের নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আদিম’ নির্মাণ করেই পরিচিতি পেয়েছেন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা যুবরাজ শামীম। তার ছবিটি ৪৪তম মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হওয়া ছাড়াও বিশ্বের অন্তত এক ডজন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শীত হয়েছে।
গেল বছরের মে মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘আদিম’। যুবরাজ মনে করেন, একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র কর্মী হিসেবে যতোটা বুঝেছি, সিনেমা নির্মাণের চেয়ে দর্শকের কাছে নিয়ে যাওয়া বেশী কঠিন! সার্বিকভাবেই ঠিকঠাক প্রদর্শন ব্যবস্থা নেই। তারউপর একজন স্বাধীন নির্মাতার জন্য সেই পথ পাড়ি দেয়া যুদ্ধের নামান্তর!
পথ মসৃণ নয়, এটা জেনেবুঝেই পথে নামেন যুবরাজ। সব সামলেছেন একা। কারণ তার উদ্দেশ্য ছিলো, যে করেই হোক বড়পর্দায় ‘আদিম’ মুক্তি দেয়া। মস্কোতে পুরস্কার প্রাপ্তি সেই পথ কিছুটা সহজ করেছে বটে, কিন্তু বড়পর্দায় মুক্তি দিতে কম ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি নির্মাতাকে! সেন্সর পেতে প্রযোজক সমিতির সদস্য হওয়া থেকে শুরু করে সব ঝক্কি সামলেছেন নিজেই।
প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি মুক্তি পায় গেল বছরের ২৬ মে। সিনেপ্লেক্সসহ আধুনিক আরো কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে চলে সিনেমাটি। সিনেবোদ্ধা থেকে সাধারণ দর্শক, সবারই প্রশংসাও পায়। এরপর ঢাকায় বেশ কয়েকটি স্বাধীন প্রদর্শনীতে হাউসফুল হয় ‘আদিম’।
এবার প্রতীক্ষিত সিনেমাটি আসছে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকিতে। বৃহস্পতিবার (২ মে) রাত ৮টা থেকে প্লাটফর্মে স্ট্রিমিং হবে সিনেমাটি।
নির্মাতা যুবরাজ শামীম তার নির্মাণ যাত্রার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, ‘নির্মাণ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে এসে একটা ব্যাপার বুঝেছি। সেটা হচ্ছে একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা কষ্ট সহ্য করে হয়তো একটি সিনেমা নির্মাণ করে ফেলতে পারেন কিন্তু তার জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় প্রদর্শন ব্যবস্থা। সেই জায়গায় একজন স্বাধীন চলচ্চিত্রকর্মী হিসেবে চরকিকে আমার কাছে বেশ ভালো একটি প্লাটফর্ম মনে হয়। সেই সাথে সিনেমাটা বেশি সংখ্যক দর্শকের কাছে পৌঁছানোর পাশাপাশি নির্মাণ ব্যয়টাও তুলে আনা সম্ভব।‘
‘আদিম’ সিনেমায় যারা অভিনয় করেছেন তারা সকলেই প্রায় বস্তির বাসিন্দা। সিনেমার প্রধান চরিত্র ল্যাংড়ার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বাদশা। ৩৫ জনের মধ্য থেকে তাকে বাছাই করা হয়। সিনেমার বাকি চরিত্রের মধ্যে সোহাগী খাতুন, দুলাল মিয়া, সাদেককেও বস্তিতেই খুঁজে পেয়েছেন নির্মাতা।
কাস্টিং নিয়ে নির্মাতা বলেন, ‘ছবির প্রয়োজনেই বস্তির বাসিন্দাদের দিয়ে অভিনয় করিয়েছি। তাদের জীবনের গল্প তারাই ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন। পরে সেটাই হয়েছে। সিনেমাটি যারা দেখেছেন, তারা সবাই অপেশাদার এই অভিনয়শিল্পীদের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। যদিও তাদের সঙ্গে থেকে দীর্ঘদিন মহড়া দিয়ে চরিত্রের জন্য প্রস্তুত করতে হয়েছে।‘
সিনেমার গল্প এগিয়েছে ল্যাংড়ার ভাসমান জীবন নিয়ে। একটি অপরাধের দায় এড়াতে সে এক রেলওয়ে স্টেশন থেকে অন্য রেলওয়ে স্টেশনে ঘুরে বেড়ায়। যেখানেই যায় সেখানেই কারো না কারো সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক সময় তার সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে কালা নামের এক মাদক ব্যবসায়ীর। কালার বউ সোহাগীকে ল্যাংড়ার মনে ধরে। ল্যাংড়া সোহাগীর প্রণয় জমে ওঠে। এরপর ঘটতে থাকে আরেক ঘটনা ও গল্প চলতে থাকে নিজ স্রোতে।
সিনেমার গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছে পরিচালক নিজেই। এডিটিংও করেছেন তিনিই । সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন আমির হামযা। কালার গ্রেডিং, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, সাউন্ড ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন সুজন মাহমুদ। ছোট একটা টিম নিয়ে ৮৪ মিনিটের দুর্দান্ত এক সিনেমা নির্মাণ করেছেন পরিচালক যুবরাজ শামীম।