পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি (জেপি) নেতাকর্মীদের মধ্যে দু’দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় ভান্ডারিয়া জেপি নেতাকর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলামের বাড়ি ও ব্যবসায়িক অফিসে হামলা-ভাঙচুর করেছে।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাতে জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলা তেলিখালী ইউনিয়নের হরিণপালা গ্রামে প্রথম দফা এবং পরে উপজেলা সদরে দ্বিতীয় দফা হামলার ঘটনা ঘটে।
এসময় তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও ভাঙচুর করে। হামলায় ৫টি মাইক্রোবাস ভাঙচুর এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ৩টি মোটর সাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাকিরুল ইসলাম ও ডা. রেজাউর রহমান জানান, মারাত্মক আহত ৭ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত তেলিখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী, বর্তমানে জাতীয় পার্টি (জেপি) নেতা গোলাম কিবরিয়া রিপনের নেতৃত্বে তার জুনিয়া গ্রামের বাড়ির সম্মুখে সোমবার আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ভান্ডারিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টি (জেপি)’র নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। ইফতার মাহফিলে বক্তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভান্ডারিয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে সমালোচনা ও উস্কানীমূলক কটুক্তি করেন। এ ঘটনায় পরে ইফতার মাহফিল শেষে জেপি’র নেতৃবৃন্দ ভান্ডারিয়ায় ফেরার পথে হরিণপালা এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ, গ্রামবাসীদের সাথে ভান্ডারিয়া থেকে আগত জেপির নেতৃবৃন্দের সাথে বাক-বিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের কর্মীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে।
তেলিখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুল ইসলাম তালুকদার মাসুম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক দাবি করে জাতীয় পার্টি (জেপি)’র নেতৃবৃন্দ বিএনপির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সাথে একাট্টা হয়ে যে নিকৃষ্ট ভাষায় বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে উস্কানীমূলক বক্তব্য দিচ্ছিলো তা শুনে শেখ হাসিনার কোন কর্মী চুপ করে বসে থাকতে পারে না। তাই স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও উপস্থিত এলাকাবাসী তাদের বক্তব্যের প্রতিবাদ করে। এ ঘটনায় আমাদের ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মী আহত হয়েছেন।
তেলিখালীর ঘটনার জের ধরে সোমবার রাত ৯টার দিকে জেপির নেতাকর্মীরা উপজেলা খাদ্য গুদাম সংলগ্ন আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা করে চেয়ার টেবিল, আসবাবপত্র ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করে। এসময় তারা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলামের বাসভবন ও ব্যবসায়িক অফিস ভাংচুর ও মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। তারা ওভারব্রীজ সংলগ্ন মোঘল রেষ্টুরেন্ট একটি খাবারের দোকানও ভাঙচুর করে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে জেপি’র নেতাকর্মীদের সাথে সংর্ঘর্ষ হয়।
ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম জানান, তেলিখালীতে এক বিতর্কিত বিএনপি নেতার একটি ইফতার পার্টি শেষে জাতীয় পার্টি- জেপি (মঞ্জু) এর দলীয় নেতাকর্মীরা ভান্ডারিয়ায় ফেরার পথে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে বাকবিতন্ডা এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া করে। এর কিছু সময় পরে ভান্ডারিয়া উপজেলা সদরে জেপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর এবং লুটপাট করে। পরে একই সন্ত্রাসীরা বহুতল ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এসময় স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাদের উপর হামলা চালায় এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ৩টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। হামলায় উপজেলা ছাত্রলীলগের ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়।
ভান্ডারিয়া জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু) সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম উজ্জল জানান, তেলিখালী ইউনিয়নে একটি ইফতার অনুষ্ঠানে গেলে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং হামলায় আমাদের ৩ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
ভান্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসিকুজ্জামান জানান, তেলীখালী এলাকায় একটি ইফতার পার্টি শেষে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও জেপি (মঞ্জু) গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরে এলাকায় পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর প্রশাসক ফাইজুর রশিদ খসরু জোমাদ্দার জানান, হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়ে দলীয়ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্তের পরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
একটি গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, তেলিখালীতে ইফতার মাহফিলের আয়োজক সাবেক বিএনপি নেতা মির্জা গোলাম কিবরিয়া রিপন ভান্ডারিয়া থানা ও পিরোজপুর সদর থানায় নাশকতা মামলার আসামি। তিনি আদালত থেকে জামিন না নিয়েই এলাকায় থেকে সরকার বিরোধী নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।