ঢাকা মহানগরের যাত্রাবাড়ি এলাকার ধলপুরে তেলেগু সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের কোন ধরনের পুনর্বাসন ছাড়াই আগামীকাল শনিবারের মধ্যে তাদের বাড়িঘর থেকে বেরিয়ে যেতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের মৌখিক নির্দেশকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
এক বিবৃতিতে ঐক্য পরিষদ জানায়, গতকাল ৯ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট এলাকার মাতব্বরদরে নিজ অফিসে ডেকে নিয়ে মেয়র এ নির্দেশনা দেয়ার পর থেকে এলাকার প্রায় ১ হাজার ৩শ’ বাসিন্দা দারুণ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে অনেক বাড়িতে রান্নবান্না বন্ধ হয়ে গেছে। এই কলোনীতে যারা বসবাস করে তারা সবাই তেলেগু সম্প্রদায়ের মানুষ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মেয়রের এ নির্দেশনার আগের দিন বুধবার স্থানীয় যাত্রাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কলোনীর মাতব্বরদর থানায় ডেকে নিয়ে হুমকি দিয়ে বলেন, সিটি কর্পোরেশন যে নির্দেশনা দেবেন তা তাদের অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে। এর বিরুদ্ধে কোন ধরণের প্রতিবাদ, মানববন্ধন চলবে না বা কাউকে এ বিষয়ে কোন কিছু বলা যাবে না।
এ ঘটনার পর এলাকার তেলেগু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা আজ (শনিবার) সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে জমায়েত হয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মানববন্ধনে তারা বলেন, বৃটিশ আমলে বৃটিশ সরকার ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্য থেকে তাদের পূর্ব পুরুষদের এ অঞ্চলে নিয়ে এসেছিল ‘জাত মেথর’ হিসেবে কাজ করানোর জন্য এবং সারাদেশে ‘মেথর পট্টি’ গড়ে তুলে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছিল।
কালের পরিক্রমায় জাত মেথরদের সুপরিকল্পিতভাবে তাদের পুরুষানুক্রমিক পেশা থেকে উৎখাত করে তাদের স্থলে বাঙ্গালীদের নিয়োগের জন্যে পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে মেথরদের ‘পরিচ্ছন্নতা কর্মী’ হিসেবে অ্যাখ্যা দেয়া হয়। এর মাধ্যমে জাত মেথরদের বেশিরভাগকে তাদের জাত পেশা থেকে সুকৌশলে বঞ্চিত করা হয় এবং অন্যকোন পেশায় তাদের নিয়োগের কোন সরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সুদীর্ঘকাল ধরে তেলেগুভাষী মেথর সম্প্রদায়ের একটি অংশ ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানার ধলপুরে বসবাস করে আসছে।
মানববন্ধনে তারা কোন ধরনের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছাড়া সুদীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে আসা পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া বাসস্থান থেকে উচ্ছেদের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. কিশোর রঞ্জন মন্ডল, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ড. প্রভাষ কুমার রায়, নির্বাহী সম্পাদক পলাশ দে প্রমুখ তেলেগু সম্প্রদায়ের মানবন্ধনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, ঐ মেথর কলোনীতে একটি প্রাচীন মন্দির, দুটি গীর্জা ও একটি স্কুল রয়েছে।