রুবেল হোসাইন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) এর লাইব্রেরি ও আবাসিক হলগুলোতে দিনে-দুপুরে ঘটছে চুরির ঘটনা। হোন্ডা, সাইকেল, ল্যাপটপ, মোবাইল, মানিব্যাগসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম উধাও হয়ে যাচ্ছে। এই নিয়ে আতংক বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩-৫ টার সময় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ২২৭ নং কক্ষ থেকে আবাসিক শিক্ষার্থী সবুজের ১টি ল্যাপটপ, ১টি ব্যাগ ও একটি মানিব্যাগ চুরি হলে চারিদিকে শোরগোল পড়ে যায়। এর আগে এই হলের ১১৭ নং কক্ষ থেকেও ফোন চুরির ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে গত মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের গণরুম থেকে ৩টি স্মার্ট ফোন চুরির ঘটনায় আশুলিয়া থানায় জিডি করেন ভুক্তভোগী ৩ শিক্ষার্থী।
এর আগে, গত ৯ সেপ্টেম্বর পালসার বাইকে (ফরিদপুর ল ১১২০৩৩) করে এসে দু’জন চোর শহীদ রফিক-জব্বার হল থেকে একটি জিক্সার এসএফ (এফআই এবিএস) কালো রঙের বাইক চুরি করে। হল প্রশাসনের সিসিটিভি ফুটেজে বাইক চোরের ছবি মিললেও তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।
ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতে, তিনি সাভার আশুলিয়া থানায় চিহ্নিত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, আসামি ২জন দুর্ধর্ষ চোর। তারা বরিশাল, মাগুরাসহ বিভিন্ন জেলায় চোরা-কারবারির মামলায় জড়িত। মাগুরা জেলায় চুরির দায়ে পলাতক আসামি তাদের একজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার ভঙ্গুরতাকে প্রকাশ্যে চুরির ঘটনার জন্য প্রধান দায়ী বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ জায়গার সিসিটিভি নষ্ট ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আবাসিক হলগুলোরও একই অবস্থা। হলের গেস্টরুম, গণরুমসহ বিভিন্ন কক্ষে শিক্ষার্থী নির্যাতন ও র্যাগিংয়ের জন্য প্রধান ‘সহায়ক’ সিসিটিভি না থাকাকে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রশাসনের দায়সারা আচরণের কারণে চুরি হয় বলে মনে করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খালেক সিফাত। তিনি বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগেও প্রভোস্ট স্যারের সাথে হলের সিসি ক্যামেরা বিষয়ে কথা বলেছি। হলের সবগুলো সিসিটিভি নষ্ট। আমাদের হলের গেট দিয়ে ঢুকতে বাইক রাখার জায়গার সিসি ক্যামেরাও নষ্ট এবং আমরা যেই পাশে বাইক বেশি রাখি সেখানে সিসি ক্যামেরার কভারেজ নেই। তাৎক্ষণিক প্রভোস্ট স্যার স্টাফদেরকে ব্যবস্থা নিতে বললেও কাজের কাজ কিছুই করেনি। বিশেষ করে বাইক, সাইকেল রাখার জায়গাগুলোতে সিসি ক্যামেরার কভারেজ বাধ্যতামূলক করা উচিত।
চুরির জন্য সম্পূর্ণ প্রশাসনকে দায়ী করে জাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক জহির ফয়সাল চ্যানেল আইকে বলেন, শুধু হল-লাইব্রেরি না, পুরো ক্যাম্পাসই অনিরাপদ। এটার জন্য সম্পূর্ণ প্রশাসনই দায়ী। হল থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জায়গার সিসিটিভি নষ্ট। এমনকি হল প্রভোস্ট, ওয়ার্ডেন কেউই হলে থাকেন না। যার কারণে বহিরাগতরা আজ হলে এসেও চুরি করার সাহস পায়। এজন্য আমি বলবো, শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার স্বার্থে সিসিটিভি নজরদারি সক্রিয় করা হোক ও দায়িত্বরত প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করুন।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আগামীকালের মধ্যে সিসিটিভি ঠিক করার কথা বলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি। তিনি বলেন, আমার হলে গত পরশু ল্যাপটপ চুরি হয়েছে অথচ আমি জানি না। তাছাড়া অন্যান্য হলগুলোর ব্যাপারেও শুনিনি। তাদেরতো উচিত ছিল আমাকে জানানো। আমি কয়েকদিন আগেও হলের সিসি ক্যামেরা ঠিক করার জন্য বলেছি। কালকের মধ্যে সবগুলো ক্যামেরা ঠিক করা হবে।
অন্যদিকে নিরাপত্তা বিভাগকে ডেইরি গেইটসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সিসিটিভি ঠিক করার জন্য বলেছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আ.স.ম ফিরোজ-উল হাসান। তিনি বলেন, এসময়ে ডিজিটাল সিকিউরিটির জন্য সিসি ক্যামেরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি বারবার তাদেরকে সিসিটিভি ঠিক করার কথা বললেও তারা কেন এতে বিলম্ব করছে বুঝে আসে না। এ ব্যাপারে আপনি রেজিস্ট্রার ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ করুন।
রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।