পশ্চিমবঙ্গে বড় পর্দায় মুক্তি পেল জল, জঙ্গল, বারুদ, লড়াই আর এক রুদ্ধশ্বাস ছকভাঙ্গা প্রেমের কাহিনি নিয়ে ছবি ‘ইস্কাবন’। মুক্তির দিনেই যেন প্রসেনজিৎ-মিথিলা অভিনীত ‘আয় খুকু আয়’কেও টেক্কা দিচ্ছে সিনেমাটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দিনেই বেশ কয়েকটি হলে হাউস ফুলের দৌড়ে এগিয়ে মন্দীপ সাহার ‘ইস্কাবন’।
চ্যানেল আই অনলাইনকে এমনটাই জানালেন ‘ইস্কাবন’ এর লেখক রাধামাধব মণ্ডল। ছবিটি মুক্তির আগে প্রচারণাতেও ছিলো বেশ অভিনব! ‘ইস্কাবন’ এর প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ছবি দেখার আর্জি নিয়ে যায় জঙ্গলমহলের আদিবাসীরাও। মধ্যরাতে কলকাতা শহর জুড়ে পড়েছে রাতের অন্ধকারে ‘নরেনজী জিন্দা হ্যায়’র মতো রক্তে লেখা পোস্টার!
শুধু তাই নয় ছবির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) কলকাতার এক্রোপলিস মলে। এই সিনেমার লেখক জানান, সেখানেও তার সঙ্গে একদল জঙ্গলমহলের আদিবাসীদের দল আসে শহরে। তাদের ছবি ভেবে তারা নাচলেন, গাইলেন গান। আবার হলে বসে দেখলেন ছবিটি। নাচলেন তিনি সহ ছবির নায়ক সঞ্জু, সৌরভ, অনামিকা, বিখ্যাত সুরকার দেবজ্যোতি মিশ্ররাও।
উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক সেখ আব্দুল লালন। ছবির প্রিমিয়ারে সকলেই বললেন ছবি নিয়ে নানান কথা।

সিনেমাটি নিয়ে রাধামাধব বলেন, ‘মানুষের জন্য এ ছবি। জঙ্গলমহলে অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার যে ডাক। ভুল ছিল একটি রাজনৈতিক লড়াই এর আদর্শ। তাই বহু মানুষের প্রাণ হারানো, বারুদ, রক্ত, হত্যা আর ষড়যন্ত্র। বিপ্লবের আঁতুড় ঘরে, আলো ফেরানোর ইতিবৃত্ত। বারুদের বীজতলাতে প্রেমের আলপনা। এক অন্যরকম ছবি। সকলের মন ছুঁয়ে যাবেই।’
প্রিমিয়ারে পরিচালক মন্দীপ সাহা বলেন, ‘এছবির গল্প লিখেছেন আমাদের প্রিয় সাহিত্যিক রাধামাধব মণ্ডল। শহরের মানুষকে গ্রামের, জঙ্গলমহলের মানুষের জীবনযুদ্ধের একটি খণ্ডহর শোনাতে আসা। যে ছবিতে আমাদের পরিশ্রমী রক্ত, ঘাম রয়েছে। আপনাদের ভালো লাগবে, এই কঠিন পাথুরে জীবনযুদ্ধের প্রেমে আটকা পরে। হলে গিয়ে দেখুন ইস্কাবন।’
প্রযোজক শেখ আবদুল লালন বলেন, ‘আমি একজন গ্রামের মানুষ। সামান্য ব্যবসা করি। কয়েকটি নতুন ছেলের স্বপ্নদেখার সহযাত্রী হয়েছি। এটাই বড় পাওনা। গল্পটা আমাদের লালমাটির। লালমাটির ভুল আদর্শের লড়াইএর। আর সেই লড়াইয়ে ক্ষতি হয়েছিল জঙ্গলমহলের বৃহত্তর মানবগোষ্ঠীর। আমাকে টেনেছিল, এ লড়াইটা। ছবির প্রিমিয়ারে হল ভর্তি গ্রামের আদিবাসী মানুষরা এসেছিলেন ছবি দেখতে। অনেকদিন পর ধামসা মাদলে, কলকাতা শহরের বুকে বাদ্যি বাজলো, আমাদেরই ইস্কাবনের হাত ধরে।’
অভিনেতা সঞ্জু বলেন, ‘ইস্কাবন’ আমার প্রথম ছবি। ছবির গল্পই হিরো। এই ছবিতে আমি একজন কর্নেল অফিসার শিব মুখার্জীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। শুধু লড়াই আর মিশন নরেনজী নয়, আমি প্রেমও করেছি দেশ ও মাটির সঙ্গে। বহু শক্তিশালী অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আনন্দ হচ্ছে। সকলেই আমাকে নতুন বলে সাহায্য করেছেন। আমিই শুধু নায়ক নই। গল্পই ছবির নায়ক।
অভিনেতা সৌরভ দাস বলেন, ‘অসাধারণ একটি গল্প। অসাধারণ একটি টিমের সঙ্গে কাজ। সবাই খুব খুব ভালো অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে সঞ্জু, অনামিকা, বুদ্ধদা। গোটা ছবি জুড়েই একটি রহস্য। আমিই ছবির নায়ক কী না জানি না। তবে গোটা গল্পে আমি আছি, অনেকের মতোই। দারুণ আনন্দ হয়েছে। হলে গিয়ে দেখুন। হইহই করে স্বগৌরবে চলছে ছবিটি। মাওবাদীদের ছবি শুধু নয়। বললাম না প্রেম, হত্যা, ষড়যন্ত্র ও একটি পরিপূর্ণ বাংলা ছবি ইস্কাবন।’
জঙ্গলমহলের প্রেম, যৌনতা, ষড়যন্ত্র, খুন, বিস্ফোরণ, হত্যা আর জটিল রাজনীতি নিয়ে আসছে নতুন এই বাংলা ছবি ‘ইস্কাবন’। এক অভিনব চরিত্রে দেখা যাবে নবাগত সঞ্জুকে। এই ছবিতে অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়ের লেখা ও সুরে গান গেয়েছেন নচিকেতা চক্রবর্তী। এছাড়াও আরও কয়েকটি গান ‘ইস্কাবন’ সিনেমাতে গেয়েছেন শান, রূপঙ্কর বাগচি, অন্বেষা দত্তগুপ্ত। ছবির বিজিএম করেছেন দেবজ্যোতি মিশ্র।