ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে পুলিশ ও প্রশাসনের সুনাম ক্ষুণ্ণ: তদন্ত কমিটি
‘হারুন-সানজিদা-মামুন’ সবার দায় পেয়েছে তদন্ত কমিটি

রাজধানীর শাহবাগ থানায় নিয়ে আটকে রেখে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে নির্মমভাবে নির্যাতনের ঘটনায় ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে পুলিশ ও প্রশাসনের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মনে করছে তদন্ত কমিটি। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কমিটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তদন্তে সাময়িক বরখাস্ত অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন-অর-রশিদ, আরেক এডিসি সানজিদা আফরিন এবং তার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক এবং ঘটনায় যুক্ত ছাত্রলীগের চার নেতা, শাহবাগ থানার পরিদর্শক গোলাম মোস্তফার দায় পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তদন্ত কমিটি।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাদের যতটুকু দায় পাওয়া গেছে, সেই বিষয়ে তদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ডিএমপি কমিশনারের কাছে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। তদন্ত কমিটির ১৩ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন তদন্ত শেষ করতে না পারায় ডিএমপি কমিশনারের কাছে আরও পাঁচ দিন সময় চায় কমিটি। পরে তাদের পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়। গতকাল সোমবার পাঁচ দিন সময় শেষ হয়েছে।

এদিকে ওই ঘটনার জের ধরেই গত ১০ সেপ্টেম্বর এডিসি হারুনকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট শাখায় সংযুক্ত করে ডিএমপি। দুপুরে তাকে প্রত্যাহারের এ আদেশ হলেও পরে সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আরেক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে পদায়ন করা হয় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে।
এর পরদিন ১১ সেপ্টেম্বর আবার এডিসি হারুন-অর-রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়। তাতে বলা হয়, এডিসি হারুনকে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে পরদিনই বদলে যায় সে আদেশ। একই শাখা থেকে ১২ সেপ্টেম্বরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, হারুনকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) গোলাম মোস্তফাকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
৯ সেপ্টেম্বর রাতে বারডেম হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে শাহবাগ থানা হেফাজতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তিন নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে।
ঘটনার সূত্রপাতের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হকের স্ত্রী ডিএমপির এডিসি (অতিরিক্ত উপকমিশনার) সানজিদা আফরিন চ্যানেল আইয়ের সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি চিকিৎসা নিতে ওই দিন সন্ধ্যায় বারডেম হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পেতে তিনি সহকর্মী হিসেবে এডিসি হারুন অর রশিদের সহায়তা নেন। এ সময় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে এসে এডিসি হারুনকে মারধর করেন তার স্বামী আজিজুল।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, হাসপাতাল থেকে নেওয়ার পর শাহবাগ থানার ওসির কক্ষে আটকে ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধর করে পুলিশ। এডিসি হারুনের নেতৃত্বে শাহবাগ থানার পরিদর্শক গোলাম মোস্তফাসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করেন।
এই ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে ডিএমপি। কমিটির সভাপতি ডিএমপি সদর দপ্তরের উপপুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) আবু ইউসুফ। অপর দুই সদস্য হলেন রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (নিউমার্কেট জোন) শাহেন শাহ এবং অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগ) মো. রফিকুল ইসলাম।
জানা গেছে, তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ঘটনাস্থল বারডেম হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, যাদের এই ঘটনায় দায় আছে, সবার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। কারও দায় বাড়িয়েও বলা হয়নি। তদন্ত কমিটি এই ঘটনার দায় অনুযায়ী জড়িত সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছে।
মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।