নতুন বছর, নতুন শিক্ষাবর্ষ। ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ’-এর ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে স্থান পেয়েছে হাসান মতিউর রহমানের লেখা বিখ্যাত গান ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গানটি পাঠ্যবইয়ে স্থান করে নেয়ায় আপ্লুত গীতিকার।
বুধবার সন্ধ্যায় চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে আলাপকালে বহু কালজয়ী গানের এই স্রষ্ঠা জানান, ষষ্ঠ শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি বইয়ে ‘শুধিতে হইবে ঋণ’ অংশে স্থান পেয়েছে আমার লেখা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথম এই গানটি।
এরআগে নিজের উচ্ছ্বাসের সেই খবর ফেসবুকেও শেয়ার করেছিলেন হাসান মতিউর রহমান। আপ্লুত এই গীতিকার নিজের অনুভূতি জানিয়ে লেখেন, “বছরের প্রথম দিনেই এমন একটি অর্জনের সংবাদ সত্যিই বিশাল। দেখে ভালো লাগলো। আবেগে আপ্লুত হলাম। চোখ পানিতে ভিজে গেল।”
পাঠ্যপুস্তকে এই গানের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে জানতেন না হাসান। বললেন, বহুদিন আগে এই গানটি সম্পর্কে ফোন করে আমার কাছে কিছু তথ্য জানতে চাইছিলেন একজন। কবে লেখা, কে সুর করেছে- এসব বেসিক তথ্যই জানতে চাওয়া হয়। এরপর গত ১ জানুয়ারি আমাকে নীহার নামের এক ছোটভাই ফোন করে জানায় যে, গানটি পাঠ্যবইয়ে রাখা হয়েছে। বছরের প্রথম দিনে এমন খবর শুনে সত্যিই আমি চমকে গিয়েছিলাম।
এসময় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে এই গীতিকার আরো বলেন, ‘আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। বিস্মিত হয়েছি। আমার জন্য অভাবনীয়। দলমত নির্বিশেষে এই গানটি মানুষের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। অনেকেই আছেন, যারা আওয়ামী লীগকে হয়তো কম পছন্দ করেন; কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন- তাদের কাছেও এই গানটি সমান প্রিয়। গানটি পাঠ্যপুস্তকে স্থান পাবে, এটা স্বপ্নেও ভাবিনি।
হাসান মতিউরের লেখা ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত’ গানটি সুর করেছেন মলয় কুমার গাঙ্গুলী। প্রথমবার তিনিই গেয়েছিলেন। পরবর্তীতে গানটি সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। গানটির প্রেক্ষাপট নিয়েও কথা বলেন চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে।
তিনি বলেন, ১৯৯০ সালে ফ্রান্সে আওয়ামী লীগের একটা সম্মেলন হয়। সেখানে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দলে মলয় গাঙ্গুলী দাদা ছিলেন তার সফরসঙ্গী। ফ্রান্সে যাওয়ার আগে সিদ্ধান্ত হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে দুটি গান করার। গান লেখার দায়িত্ব পড়ে আমার ওপর। এই গানটি লিখতে গিয়ে ভোর হয়ে গেল, শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ মনে হলো, যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই! সেটাই গানের প্রথম লাইন করলাম। এরপর লিখে ফেললাম আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার গানটি।
নেত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ফ্রান্সের সেই সম্মেলনে গানটি করেন মলয় গাঙ্গুলী। নেত্রী গানটি শুনে প্রশংসা করেন। এটি স্টুডিওতে রেকর্ড করতেও বলেন তিনি। ১৯৯১ সালে নির্বাচনের প্রাক্কালে আমরা এই গানটি সহ মোট ৮টি গান নিয়ে একটি অ্যালবাম করেছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা আমার গানটি মলয় দাদাই গেয়েছিলেন, অ্যালবামের বাকি গানগুলো গেয়েছিলেন আশরাফ উদাসের। লাখ লাখ ক্যাসেট বিক্রি হয় তখন। রাতারাতি মানুষের মুখে মুখে চলে যায় ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত’ গানটি। বলছিলেন স্মৃতিকাতর হাসান মতিউর রহমান।
পরবর্তীতে গানটি কণ্ঠে তুলেন সাবিনা ইয়াসমিন। সেই প্রসঙ্গে হাসান মতিউর বলেন, ১৯৯৬ সালে নেত্রী তার একজন ঘনিষ্টজনকে বলেন, পুরুষ কণ্ঠের পাশাপাশি একজন নারী কণ্ঠেও যেন গানটি রেকর্ড করা হয়। সেই সময়ে গানটি সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে রেকর্ড করা হয়। এরপর তিন দশক ধরে সেই গানটিই বাজানো হয়।