কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী একটি চলন্ত বাসে সকল যাত্রীর কাছ থেকে সর্বস্ব লুট ও গণধর্ষণের ঘটনায় রাজা মিয়া নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইল পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার।
তিনি জানান, চলন্ত বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এ সময় তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ওই বাসে ডাকাতির পাশাপাশি এক নারী যাত্রীকে গণধর্ষণ করে ডাকাত দল।
এরপর বুধবার ভোরে ডাকাতদলের সদস্যরা টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া এলাকায় বাসটি রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যান। ধর্ষণের শিকার ওই নারী বুধবার বিকালে মধুপুর থানায় ধর্ষণ ও ডাকাতির মামলা করেন। গ্রেপ্তার আসামির নাম রাজা মিয়া। বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা এলাকায়। সে টাঙ্গাইলের যাত্রীবাহী বাস ঝটিকা সার্ভিসের একজন চালক। দীর্ঘদিন যাবত সে টাঙ্গাইল নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিল।
পুলিশ সুপার জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের একটি বাস অন্তত ২৪ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। পরে রাত ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে খাবারের জন্য বিরতি দেওয়া হয়। সেখান থেকে ৫ মিনিট যাওয়ার পর মূল সড়ক থেকে প্রথমে ৩ জন যাত্রী ওঠেন। কিছু দূর যাওয়ার পর আরও ৪ জন যাত্রী ওঠেন। নির্ধারিত স্টেশন ছাড়া কিছুদূর যাওয়ার পর আরও ৩ জন যাত্রী সেজে বাসে ওঠেন। আনুমানিক রাত ১২টার দিকে যাত্রীরা ঘুমানোর একপর্যায়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের নাটিয়াপাড়া এলাকা পৌঁছালে ডাকাত দলের সদস্যরা হঠাৎ করে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে পুরো বাসের নিয়ন্ত্রণ নেন।
টাঙ্গাইলের গোড়াই এলাকায় থেকে বাসটিকে ঘুরিয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা কালিহাতী হয়ে মধুপুরে আসে। এরই মধ্যে ডাকাত দলের সদস্যরা সবার হাত-মুখ ও চোখ বেঁধে জিম্মি করেন। এরপর যাত্রীদের কাছে থাকা মোবাইল, টাকা, স্বর্ণালংকার লুট করে নেন। পরে ডাকাত দলের সদস্যেরা গাড়িতে থাকা এক নারীকে গণধর্ষণ করেন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালুর ঢিবির কাছে বাসের গতি থামিয়ে পালিয়ে যান ডাকাতদলের সদস্যরা। তখন চলন্ত বাসটি কাত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়।
এ ব্যাপারে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। কুষ্টিয়ার হেকমত নামে ঐ বাসের যাত্রী বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলটি দায়ের করেন।
গণধর্ষণের শিকার ঐ নারী যাত্রীকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে
বাসে ডাকাতদের দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরে তাকে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়।
মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেহেনা পারভীন বলেন, তিন সদস্যের মেডিকেল টিম পরীক্ষা করেছে। কিছু সাইন পজিটিভ আছে। সাইন অব স্ট্রাগল রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিনি। তার সোয়াব সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানভীর আহমেদ জানান, ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়েছে। জবানবন্দি নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
গ্রেপ্তার হওয়া রাজা মিয়াকে রিমান্ডে চাইবে পুলিশ
পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানিয়েছেন টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত রাজা মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করবে পুলিশ।
ধর্ষণের শিকার নারী বাসেরই এক সুপারভাইজারের সাবেক স্ত্রী
ঈগল বাসটির মালিক পাবনার পরিবহন ব্যবসায়ী সোলায়মান হক। তিনি জানান, বাসটির চালক, সুপারভাইজার ও হেলপার তিনজনের বাড়িই পাবনা সদরে। তার বাসে থাকা ওই তিন কর্মী দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত। তাদের বিরুদ্ধে কোনো দিন কোনো অপকর্মের অভিযোগ তিনি পাননি।
তিনি স্বীকার করেন, বাসে সিট খালি থাকলে মাঝেমধ্যেই রাস্তা থেকে যাত্রী তোলা হতো। একইভাবে ঘটনার দিনও কয়েকজন যাত্রী তোলা হয়েছিল।
সোলায়মান হক বলেন, যাত্রীর ছদ্মবেশে তারা যে ডাকাত ছিলেন, এটা কেউ বুঝতে পারেননি। রাত ৯টা পর্যন্ত তিনি বাসে থাকা সুপারভাইজার রাব্বীর সঙ্গে কথা বলেছেন। ভোরে তিনি ডাকাতির ঘটনা জানতে পেরেছেন। পরে থানায় যোগাযোগ করেছেন। বাসটিসহ বাসে থাকা চালক, সুপারভাইজার, হেলপার এখনো পুলিশের হেফাজতে আছেন।
সোলায়মান হক বলেন, তার পাঁচটি বাসের মধ্যে কুষ্টিয়া থেকে একটি বাস নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করে। প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিনও বাসটি নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিল। বাসটির চালক ছিলেন পাবনা জেলা সদরের বেড়াকপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম। সুপারভাইজার ছিলেন পাবনা জেলা সদরের রাধানগর মহল্লার রাব্বী হোসেন ও হেলপার একই উপজেলার টেবুনিয়া গ্রামের দুলাল হোসেন। বাসে থাকা যে নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তিনিও তার বাসেরই এক সুপারভাইজারের সাবেক স্ত্রী। ওই সুপারভাইজারও পাবনা সদরের বাসিন্দা। কিছুদিন আগে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়েছে। মেয়েটি এখন ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।