এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
চরিত্রের কারণে অভিনয় শিল্পীদের ওজন কমানোর গল্প প্রায়ই শোনা যায়। দেখা যায় কেউ সুঠাম দেহে হাজির হচ্ছে, কেউ বা সিক্স প্যাক বানাচ্ছেন কেউ বা মাসলম্যান হচ্ছেন, আবার কোনো অভিনেত্রী আকর্ষণীয় ফিগারে আবেদনময়ী হিসেবে হাজির হচ্ছেন! বাংলাদেশে তুলনামূলক কম দেখা গেলেও বলিউডে এমন ঘটনা মামুলী ব্যাপার!
সেসব নিয়ে বাংলাদেশের দর্শকদের পাশাপাশি খোদ শিল্পীদেরও আগ্রহ দেখা যায়। তারা বিভিন্ন সময় অনুপ্রেরণায় বলিউড প্রসঙ্গ টানেন। তবে চরিত্রের প্রয়োজনে নিজের ওজন বাড়িয়ে শত কেজির বেশি তৈরি করার নজির বাংলাদেশে তো নেই, এমনকি বলিউডেও কদাচিৎ!
সর্বশেষ চোখে পড়ে বি-টাউনের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ আমির খান তার অভিনীত ব্লকবাস্টার ‘দঙ্গল’ ছবিতে এমনটি করেছিলেন। আমির খানের মতো এই কাজটি করলেন ঢাকার ‘জেন্টলম্যান’ খ্যাত অভিনেতা এফএস নাঈম।
মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সালজার রহমান পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘কালপুরুষ’-এ চরিত্রের প্রয়োজনে ৭৫ কেজি কেজি থেকে ১১০-এ ওজন বাড়ান। চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই অসাধ্য সাধন করতে নাঈমের সময় লেগেছে ১০ মাস। এই ওজন নিয়ে শুটিং করেন ১৫ দিন। গত ডিসেম্বরে ‘কালপুরুষ’র শুটিং সম্পন্ন করেছেন। পরে আবার ওজন কমিয়ে ফেলছেন।
চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে আলাপে নাঈম বললেন, ‘তকদীর’ নির্মাতা শাওকী জানায় একটি স্ক্রিপ্ট আছে আপনি পড়েন। আপনার জন্য ভেবেছি। পড়েই আমি মানসিকভাবে সেট হয়ে যাই। কিন্তু তারা আমাকে জানায়, এই চরিত্র করতে হলে আমাকে ৩০ কেজি ওজন বাড়াতে হবে। আসলে শাওকীর ‘কারাগার’ আমাকে নতুনভাবে পরিচিতি দিয়েছে। সে আমাকে একটা কথা বললে রাখতেই হবে। এটাও ভাবি একজন অভিনেতা হিসেবে যদি এ কাজটি করে অভিনেতা ও নেক্সট জেনারেশনের জন্য অনুপ্রেরণার নাম হতে পারি তাহলে শিল্পী হিসেবে নিজেকে সার্থক মনে করবো।
ওজন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ব্যক্তিগত ট্রেইনার রওনক ঘোষ, শাওকী, অনিম, সালজারসহ কয়েকজন মিলে স্পেশাল কেইস ভেবে রীতিমত বোর্ড মিটিং বসান নাঈম। এই অভিনেতা জানান, তিন কিস্তিতে আড়াই মাস করে ভাগ করে ন্যাচারালির নিয়মের মতো ওজন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। ভাত, সবজি এবং মাছ এই তিন খাবারকে গুরুত্ব দিয়ে ডায়েট চার্ট করে গেলেন নাঈম। এর মধ্যে ১০ মাসে কখনো কোনোদিনও এক্সারসাইজ থামাননি। ঠিকঠাকভাবে শুটিং সম্পন্ন করেন। নাঈম বলেন, এখন ওজন কমানোর প্রসেসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
ট্রান্সফর্মকালীন কিছুটা হতাশায় পড়েছিলেন নাঈম। সেই গল্প শুনিয়ে বললেন, শুটিংয়ে একমাস আগে ডিপ্রেশনে পড়ে যাই। আগে আমি খুবই ফিট ছিলাম। সেখান থেকে পরিবর্তন হয়ে যাই। টানা একবছর আমি জিন্স প্যান্ট, মোটা কাপড় পরতে পারিনি। পাজামা বা ট্রাউজার পরতে হতো। কোনো অ্যাওয়ার্ড আয়োজনে ডাকা হলে যেতাম না, বাসা থেকে বের হতাম না। দুমাস আমেরিকা, কুড়ি দিন ইন্ডিয়াতে ছিলাম। তখন অনেকেই হাসিঠাট্টা ও মজা করে নানান প্রশ্ন করতো, জ্ঞান দিত। কিন্তু তারা তো জানেনা কী জন্য আমার ট্রান্সফর্ম হচ্ছিল। এসব বিষয় আমাকে অনেক পীড়া দিতো। শুধু আমি একা নই, আমার ফ্যামিলিও আমার জন্য এইসময়ে অনেক সাফার করেছে এবং মানসিকভাবে সাপোর্ট করেছে।
সব বাদ দিয়ে এতো ওজন বাড়িয়ে কেন এ কাজটির সিদ্ধান্ত নিলেন? নাঈমের সহজ স্বীকারোক্তি, শাওকীদের সার্কেলে ফিল্ম সিন্ডিকেট প্রথম কারণ। তারা আমাকে ট্রাস্ট করেছে। ‘কালপুরুষ’-এ যে চরিত্র দিয়েছে এই গল্প এদেশে আগে হয়নি। যেহেতু চরিত্রটি নতুন পেয়েছি তাই আমি মোটেও হাতছাড়া করিনি। এখন বেশি কিছু বলবো না, কদিন পরে চরকি-তে রিলিজ হবে দর্শক তখন সবকিছু বুঝতে পারবেন। টিজার বা আমার ওজন বাড়ানোর দেখে ইন্তেখাব দিনার, মীর সাব্বির, সিঙ্গার কনাসহ অনেক সহকর্মী প্রশংসা করেছেন, আমি সবার কাছে গ্রেটফুল।
এফএস নাঈম বলেন, আমাদের রিসার্চ বা ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট কম হতে পারে কিন্তু আমাদের দেশের শিল্পীদের যোগ্যতা কম না। যেটা কম আছে সেটা হচ্ছে সুযোগ। আজ যদি আমাদের ইন্ডাস্ট্রি বলিউড হলিউডের মতো হতো তাহলে আমাদের আর্টিস্টরা গ্লোবাল হয়ে যেতো। আমাদের শাকিব খানের ‘তুফান’ টিজারে তার লুক উপস্থিতি, চঞ্চল ভাইয়ের উপস্থিতি সবকিছু মিলিয়ে অন্য লেভেল লেগেছে। ‘তুফান’ টিজার এতো ভালো লেগেছে যে আমি স্ট্যাট্যাস দিয়েছি। এমনকি ‘রাজকুমার’ দেখে পোস্টে দিয়েছিলাম, ‘এই ছবি দেখলে যে কেউ বুঝবে শাকিব খান সত্যি নাম্বার ওয়ান। এইটাই সত্যি।’ কথাগুলো বললাম কারণ, এগুলো প্রমাণ করে আমাদের দেশে যোগ্যতার অভাব নেই। দরকার শুধুমাত্র সঠিক সুযোগ আর সুযোগ।
নাঈম বলেন, ‘কালপুরুষ’ এর মাধ্যমে আমি আসলে বাংলাদেশের সকল অভিনেতাদের বলতে চেয়েছি, ক্রিস্টিয়ান বেল বা আমির খান যদি এগুলো করতে পারেন, তবে আমরা বাংলাদেশী অভিনেতারাও পারি।
সালজারের প্রথম নির্মাণ ‘কালপুরুষ’। সিরিজটি শিগগির চরকিতে স্টিমিং হওয়ার কথা। সিরিজে নাঈম ছাড়াও অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, তানজিকা আমিন, ইমতিয়াজ বর্ষণ ও রেজওয়ান পারভেজ প্রমুখ।