
জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে হত্যা করার জন্য একটি হাতে তৈরি বন্দুক ব্যবহার করেছিল হত্যাকারী তাৎসুইয়া ইয়ামাগামি।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা সন্দেহভাজন তাৎসুইয়া ইয়ামাগামির বাড়িতে বেশ কয়েকটি হাতে তৈরি অস্ত্র পেয়েছেন। এখনও তদন্ত চলছে। এদিকে অসন্তুষ্টি থেকে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামলাকারী অনেক আগেই আবেকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন।
এনএইচকে’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশের কাছে হামলাকারী তাৎসুইয়া ইয়ামাগামি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি শিনজো আবের প্রতি ‘অসন্তুষ্ট’ ছিলাম। তাই তাকে গুলি করতে চেয়েছিলাম। তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। তবে তার রাজনৈতিক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আমার কোন ক্ষোভ নেই।’
শিনজো আবের কার্ডিওপালমোনারি অ্যারেস্ট হয়েছিল
নারা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় সময় ৫টা ৩ মিনিটে শিনজো আবের মৃত্যু হয় বলে বিবিসি জানায়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন তার অবস্থা যে গুরুতর, তেমন কোনো লক্ষণ ছিল না। চিকিৎসক জানান, ঘটনাস্থলে শিনজো আবে কার্ডিওপালমোনারি অ্যারেস্টে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর গুলিটি তার কাঁধে লেগেছিল।


চিকিৎসকরা সাড়ে চার ঘণ্টা আবেকে বাঁচাতে চেষ্টা চালায়
হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে চিকিৎসক দল শিনজো আবেকে বাঁচাতে চেষ্টা চালিয়েছে। তারা তার রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে চেষ্টা চালিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ১০০ ইউনিটের বেশি রক্ত দেওয়া হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে এক চিকিৎসক নিশ্চিত করেন, আবের শরীরে দুটি ক্ষত পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো গুলির ক্ষত। কিন্তু চিকিৎসক দল অস্ত্রোপচারের সময় কোন গুলি খুঁজে পায়নি।
বিজ্ঞাপন
হামলাকারী জাপানের সাবেক নৌসেনা
তাৎসুইয়া ইয়ামাগামি নামের ৪১ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে আটক করেছে। হামলাকারী জাপানের সাবেক নৌসেনা (জাপানিজ মেরিটাইম সেলফ ডিফেন্স ফোর্স)। নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি একটি অস্ত্র দিয়ে তিনি শিনজো আবেকে গুলি করেন। আটকের পর তার অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। হামলার সময় তাঁর পরনে ধূসর রঙের টিশার্ট ও ট্রাউজার ছিল।
বক্তৃতা করতে করতে হঠাৎই গুলিবিদ্ধ
পশ্চিম জাপানের নারা শহরে একটি কর্মসূচিতে বক্তৃতা করছিলেন শিনজো আবে। তাকে চার পাশে ঘিরেছিলেন অনেকে। মঞ্চে উঠে বক্তৃতা করছিলেন শিনজো আবে। এই সময়ই তার পেছনের দিকে গুলি করা হয় জাপানের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ।
গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন শিনজো। তার জামায় রক্তের দাগ ছিল। উদ্ধার করতে জড়ো হয়েছেন অনেকে। দ্রুত উদ্ধার করে শিনজো আবেকে হেলিকপ্টারে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা রক্তের প্রবাহ বয়ে যেতে দেখেছেন। পুলিশ এবং নিরাপত্তারক্ষীরা চারপাশের এলাকা ঘিরে ফেলে। ভবন থেকে নেমে আসা বন্দুকধারীকে গ্রেপ্তার করেছে নারা পুলিশ।

জাপান পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের নির্বাচনে একজন প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারণা চালানোর জন্য শিনজো আবে নারা শহরে গিয়েছিলেন।
আবে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলেও জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতিতে তার বড় প্রভাব রয়েছে। এই দলের বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ আবের হাতে ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শিনজো আবে ছিলেন জাপানের সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী। ২০০৬ সালে তিনি প্রথবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১২ সালে তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রী হন।

শিনজো আবে ধনাঢ্য রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছেন। তার বাবা ছিলেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া তার এক দাদা জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
জাপানে বন্দুক হামলা খুবই বিরল ঘটনা। কারণ সেখানে অস্ত্র বহন করা নিষিদ্ধ। এছাড়া জাপানে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের টার্গেট করে হত্যার ঘটনাও খুব একটা দেখা যায় না।
২০০৭ সালে নাগাসাকি শহরের মেয়র ইচো ইতোকে গুলি করে হত্যা করেছিল গ্যাংস্টাররা। ১৯৬০ সালে জাপানের সোশালিস্ট পার্টির প্রধানকে বক্তব্য দেবার সময় গুলি করে হত্যা করে ডানপন্থীরা।
বিজ্ঞাপন