আর মাত্র কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা। শক্তি ও সামর্থ্যে এগিয়ে থাকা শক্তিশালী ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ফুটবল মহারণে নামবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে বৃহস্পতিবারের রাতের লড়াইকে ঘিরে এখন সকলের মনোযোগ। বন্ধুপ্রতিম দুই রাষ্ট্রের ম্যাচে প্রতিপক্ষকে রুখে দেয়ার পরিকল্পনায় টিম টাইগার্স। পাল্টা আক্রমণে সফল হয়ে হাভিয়ের ক্যাবরেরার শিষ্যদের রয়েছে অভাবনীয় জয়ের বাসনাও!
জাবের আল-আহমদ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টায় শুরু হবে খেলা। অ্যাওয়ে ম্যাচে নিজেদের উপর আস্থা রেখে র্যাঙ্কিংয়ে ৮৬ ধাপ এগিয়ে থাকা ফিলিস্তিনের সঙ্গে বিশেষ কিছু করে দেখানোর সরাসরি বার্তা দিয়ে রাখলেন লাল-সবুজের দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া।
ম্যাচের ভেন্যুতে বুধবার রাতে অনুশীলন সেরে নেয় দুদল। এদিন সংবাদ সম্মেলনে জামালের সঙ্গে হাজির হন প্রধান কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা। গুরু-শিষ্যর কন্ঠে ছিল আশার পালে হাওয়া লাগানো আত্মবিশ্বাস। ইতিবাচক ফল আসা নিয়েই ছিল তাদের আশাবাদ।
এএফসি এশিয়ান কাপে শেষ ষোলোতে খেলে তাক লাগিয়ে দেয় যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিন। সেই বাস্তবতাকে মাথায় রেখে জামাল বলেন,‘অবশ্যই এটা আমাদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি ফিলিস্তিন দারুণ পারফর্ম করছে। যদিও আমাদের নিজেদের উপর বিশ্বাস আছে। নিজেদের সেরাটা দেয়ার লক্ষ্য থাকবে। অবশ্যই কালকের (আজ) ম্যাচ সহজ হবে না। তবে নিজেদের প্রতি আস্থা রাখতে হবে যে, বিশেষ কিছু করতে পারি। ইতিবাচক ফলাফলের জন্যই এগিয়ে যাব।’
‘আমরা ২ মার্চ থেকে ক্যাম্প শুরু করেছিলাম। এটা লম্বা সময় ধরেই ছিল। কাল আমাদের ম্যাচে নিজেদের খেলাটা দেখাতে হবে। সবাই পরিশ্রম করেছি। প্রত্যেকে নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করেছে। কাল মাঠে আমাদের খেলাটা দেখাতে হবে, যাতে দিনটা আমাদের হয়।’
ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের ফলে ফিলিস্তিনে চলছে মানবিক সংকট। বেঁচে থাকার লড়াইটাই যাদের করতে হয় নিয়মিত, সেই দেশের ফুটবলাররা নিজ দেশে খেলতে পারছেন না হোম ম্যাচ। জামাল ভূঁইয়াকে বিষয়টি মর্মাহত করলেও ম্যাচকে ঘিরেই যে দলের সবার মনোযোগ, সেটি সাফ জানিয়ে রাখলেন। কুয়েতের মাঠে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতি ও সমর্থন পাওয়ার প্রত্যাশার কথাও বিনয়ের সঙ্গেই বলেন।
‘আমরা সবাই দেখছি যুদ্ধ চলছে। সবাই বিষয়টা নিয়ে মর্মাহত। তবে আমাদের মাঠের ফুটবলেই নিজেদের কাজটা করার ব্যাপারেই মনোযোগ রাখতে হবে। ফুটবল মাঠের বাইরে কী ঘটছে, সেসব নিয়ে নয়।’
‘বাংলাদেশ আমার দেশ। আমি জানি কুয়েতে অনেক বাংলাদেশি আছেন। আমি চাই, উনারা এসে সমর্থন দিক। ফিলিস্তিনের পরিস্থিতির জন্য তাদের অন্য কোনো দেশ সমর্থন করতে পারে। কিন্তু আমার মানুষরা আমার দেশকে সমর্থন দিয়ে যাক।’
গত এক বছরে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সে ইতিবাচক দিক লক্ষণীয় ছিল। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছিল সেমিফাইনাল। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রথম রাউন্ডে মালদ্বীপকে হারিয়ে দেয়। দ্বিতীয় রাউন্ডে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী লেবাননের সঙ্গে ঘরের মাঠে করেছিল ড্র। সেসব নিকট অতীত সামনে তুলে এনে ভালো ফলাফল আসতে পারে, এমন ইঙ্গিত দেন ক্যাবরেরা।
‘স্কোয়াডে অনেক খেলোয়াড়, এখানে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করা হয়েছে। সিনিয়রদের সঙ্গে তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়ও রয়েছে। সৌদি আরবে ভালো একটা ক্যাম্প করে এখানে আমরা এসেছি। সুদানের বিপক্ষে ম্যাচে অনুশীলনটা ভালোভাবেই হয়েছে। কুয়েতে দারুণ আতিথেয়তা ও সুবিধা পাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি খেলায় ইতিবাচক মুহূর্ত রাখতে পারবো।’
‘প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা নিয়ে আমরা বাস্তব চিন্তার মাঝেই আছি। গত জানুয়ারিতে এশিয়ান কাপে কেমন করেছে, তা জানি। তবে আমাদের শক্তিশালী ও উপরের র্যাঙ্কিংয়ের দলের সাথে ভালো পারফরম্যান্স রয়েছে। সেটা খুব বেশি আগের কথা নয়। তাই আমরা বিশ্বাস রাখছি, সেই পন্থাতেই আমরা কাল ফিলিস্তিনের মুখোমুখি হবো। আশা করি, ইতিবাচক ফল আসবে।’