সিলেট-সুনামগঞ্জ ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হচ্ছে। শেরপুরে বন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। নেত্রকোণায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ লাখ মানুষ। বিচ্ছিন্ন আছে নেত্রকোণাার সাথে ঢাকার রেল যোগাযোগ। যমুনা-ব্রহ্মপুত্র ধরলার পানি বেড়ে সিরাজগঞ্জ-কুড়িগ্রামেও পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে জানা গেছে সেসব জেলার বন্যার পরিস্থিতি।
শেরপুর
শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে শতাধিক প্লাবিত হওয়ায় ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি ও উজানের ঢলের তেজ কিছুটা কমলেও বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। ঢলের তোড়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, নদীর বাঁধ, সেতু-কালভার্ট ভেঙ্গে যাওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি এলাকার মানুষজনকে উদ্ধার করতে প্রশাসনের নির্দেশে ফায়ার সার্ভিস ও স্কাউট সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে।
শেরপুরে ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে নিখোঁজ হওয়ায় ১৫ ঘণ্টা পর এক কৃষক ও এক রাজমিস্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল থেকে পানির তোড়ে ভেসে নিখোঁজ ছিলেন তারা। এছাড়া এছাড়াও বন্যার পানিতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে আরও এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জে দ্রুত যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই নদীর তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে বাঁধভাঙা ও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জ শহরের হার্ডপয়েন্ট এলাকায় যমুনার পানি গত ১২ ঘন্টায় ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি ১২ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার অভ্যন্তরীণ ফুলজোড়, ইছামতি, করতোয়া, বড়াল, হুড়াসগরসহ অন্যান্য নদী ও খাল-বিলের পানি বেড়েই চলেছে। এতে চরাঞ্চল বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ সকল এলাকার হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমির পাট, তিল, কাউন, বাদাম, শাক-সবজিসহ উঠতি ফসল নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা।
নেত্রকোণা
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে নেত্রকোণার কলমাকান্দা, সুসং দুর্গাপুর ও বারহাট্টা উপজেলায় ডুবে গেছে ৩ লাখের বেশি বাড়িঘর। তলিয়ে গেছে নেত্রকোণা-কলমাকান্দা সড়ক, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে আন্ত:উপজেলা সড়ক। নেত্রকোণার ইসলামপুরে পানির তোড়ে রেলব্রিজ ভেঙে ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে কয়েকশ মাছের খামার।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামেও বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে। জেলার ৬ উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী। পানির তীব্র স্রোতে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে দুধকুমার নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ১শ মিটার ভেঙ্গে পড়েছে।
দেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এরফলে সারাদেশের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
জামালপুর
জামালপুরে যমুনা ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৩৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ১৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাহাড়ি ঢলে ব্রক্ষপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ি সড়কের মন্ডল বাজার এলাকায় ভেঙ্গে উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, দশানী ও জিঞ্জিরাম নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার পাট, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে যাচ্ছে।